ট্রাম্পের শুল্কে ৩০০ পোশাক কারখানা বন্ধের শঙ্কা
প্রকাশিতঃ 6:25 pm | July 15, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে সহসাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলো। বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ পোশাক কারখানা। এতে কয়ে লাখ শ্রমিকের কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের বৈঠক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্বস্তির বার্তা আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা এই শুল্ক না কমলে দেশের পোশাক খাতে বড়ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রপ্তানিকারক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গড়ে ১৬ শতাংশ (১৫.৬২%) শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করে। ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে তখন মোট ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ বড় ধরনের অর্থনৈতিক আঘাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, এখন তা তিন গুণেরও বেশি। এই হঠাৎ ও ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান দুই বাজার। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই দেশের পোশাক রফতানির সবচেয় বড় গন্তব্য। দেশটিতে দেশের পোশাকের ২০ শতাংশ রফতানি হয়ে থাকে। গেল এপ্রিলে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রভাবে দেশটির অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ স্থগিত করে দেয়। পরে পালটা শুল্কারোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলে ক্রয়াদেশের স্থগিতাদেশ উঠে যায়। ট্রাম্প শুল্কের বিষয়টি জুলাইয়ে আবার সামনে নিয়ে এলে নতুন করে ক্রয়াদেশ স্থগিত হতে থাকে। বেশকিছু পোশাক কারখানার মালিক ক্রয়াদেশ স্থগিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, এরই মধ্যে ওয়ালমার্ট, স্মার্টেক্সসহ কয়েকটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান তাদের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে।
দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতনিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘যেহেতু শুল্পের পরিমাণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি, ঠিক কী পরিমাণ প্রভাব পড়বে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে শুল্ক যদি ৩৫ শতাংশই থাকে, তাহলে ২০০ থেকে ৩০০ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমার বলে ধারণা। প্রকৃত ক্ষতি আসলে কী পরিমাণ হবে, চূড়ান্ত শুল্ক নির্ধারণের পরই তার প্রভাব বুঝা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং তারা আশাবাদী, তাই আমাদের আশাবাদী হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোশাকের মোট রফতানির প্রায় ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের কাজ হয়ে থাকে। তবে এসব ফ্যাক্টরি যে পুরো সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাজ করে তা নয়। শুল্কের প্রভাবে এসব কারখানায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে।’
বিজিএমইএ সূত্র বলেছে, ছোট-মাঝারি মিলে ১ হাজার ১০০-এর বেশি কারখানায় ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে এসব কারখানা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেছেন, ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোর সক্ষমতায় ঘাটতি আছে। বাড়তি শুল্কের চাপ এসব প্রতিষ্ঠান সামাল দিতে পারবে না। ফলে ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাবে না তারা। ক্রয়াদেশ না পেলে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। চাকরি হারাবেন লাখ লাখ শ্রমিক।
উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করে যদি বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এই বাড়তি শুল্কহার কমিয়ে আনা যায়, তাহলে উল্টো বাজারটিতে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার যদি বেশি হয়, তাহলে এই বাজার ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
পোশাক শিল্পের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্পের প্রভাবে সারাবিশ্বই একটি হুমকি পড়েছে। এখনো কোনো দেশের জন্য শুল্ক চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ হয়নি। প্রায় সব দেশই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম ও ভারতের ক্ষেত্রেও শুল্ক নির্ধারণ হয়নি। তবে শুল্ক যদি ৩৫ শতাংশই থাকে দেশের পোশাক শিল্পে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যদি কম সুবিধা পায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রফতানিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।’
কালের আলো/এমএএইচএন