সেই শিক্ষার্থীকে সাইবার বুলিং না করতে বাবা-মায়ের আহ্বান
প্রকাশিতঃ 5:44 pm | July 15, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা থেকে সুরক্ষা চেয়ে মামলা করা ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী মেহরীন আহমেদকে সাইবার বুলিং না করার আহ্বান জানিয়েছেন তার বাবা-মা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে এলাকায় কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (সিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে বাবা-মায়ের এ আহ্বানের কথা তুলে ধরেন মেহরীনের আইনজীবী ইশফাকুর রহমান গালীব।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিংয়ে শিকার হচ্ছেন মেহেরীন। বাবা-মায়ের সাথেই থাকেন মেয়ে।মেয়েকে যেন সাইবার বুলিং না করা হয়, সুস্থ জীবনযাপনে ফিরতে পারেন তার জন্য নিবেদন জানিয়েছেন বাবা-মা।
আইনজীবী ইশফাকুর রহমান বলেন, চিঠি দিয়ে মেহরীনের মা আমাকে জানিয়েছেন, মামলার সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেহরীন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বুলিংয়ের কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাকে যেন সাইবার বুলিং না করা হয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাবা-মা নিবেদন জানিয়েছেন।
মেয়েকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তারা ফিরে পেতে চান। প্রয়োজনে মেয়েসহ তারা বাবা-মা তিনজন মিলে একসাথে কাউন্সিলিং করতে চান।
এ আইনজীবী আরও বলেন, বাবা-মায়ের সাথে একই বাসায় পাশাপাশি রুমে থাকেন মেহরীন। একই টেবিলে খাওয়া দাওয়া করেন। একই গাড়িতে চলেন। তবে বাবা-মায়ের সাথে মেয়ের ৫-৬ বছর কথা হয় না। মোবাইল মেসেজে কথা হয়। তাদের সাথে শারীরিক দূরত্ব হয়নি। মানসিক দূরত্ব হয়েছে। এটার নিরসন চান দুইপক্ষই।
মেহরীনের আইনজীবী বলেন, তার বাবা-মা দুইজনই চাকরিজীবী। এজন্য বাবা-মায়ের সাথে মেহরীনের একটি গ্যাপ তৈরি হয়। আদালতের বাইরে এটার সমাধান হয়নি বলে আদালতের দারস্থ হন মেহরীন। আদালত তার সুরক্ষার জন্য যে আদেশ দেবেন তা বাবা-মা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
আইনজীবী ইশফাকুর রহমান গালীব আরও বলেন, মেহরীনের ঘটনাটি শিক্ষনীয়। সন্তানদের যেন চাকরিজীবী বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় দেন। সন্তানদের প্রতি কেমন আচরণ করবেন। সন্তানরা কি চান তা ভালোবাসা দিয়ে দেখবেন। সন্তানদের শাসন করতে হবে, তবে সেটা যেন সুশাসন হয়। আবার বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটাও যেন মানা হয়। ছোটবেলা থেকে সন্তানদের ধর্মীয় শাসনে গড়ে তুললে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হয়।
ইশফাকুর রহমান গালীব বলেন, মেহরীন শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী নয়, ইংলিশের একজন শিক্ষকও বলা চলে। সে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়ান। এর ভেতর বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূতের মেয়েও মেহরীনের শিক্ষার্থী। তার ইংরেজি ফ্লুয়েন্স অনেক ভালো। তিনি দেশের সম্পদ হতে পারেন।
এদিকে আইনজীবীতে দেওয়া চিঠিতে মেহরীনের বাবা-মা জানান, আমাদের একমাত্র কন্যা মেহরীন আহমেদ দীর্ঘদিন থেকে শারীরীক ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। বিভিন্ন কারণে তার মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তার মধ্যে একাকিত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে তার মনের মধ্যে এক গভীর রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ধারণা সেটা থেকেই আদালতে বিষয়টি নিয়ে মামলাটি দায়ের করেছে মেয়ে। বাবা-মা হিসেবে আমরা চাই, সে যেন সুস্থ থাকেন এবং দেশের আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা আস্থা থাকে এবং আদালত থেকে যেন সুরক্ষাদেশ লাভ করেন।
এর আগে ২২ জুন বাবা নাসির আহমেদ ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে নিজের সুরক্ষা চেয়ে একই আদালতে মামলা দায়ের করেন মেহরীন। এরপর ১০ জুলাই এ মামলায় আদালতে বাবা-মা ও মেয়ের উপস্থিততে আদালতে শুনানি হয়। ওইদিন আদালতে মেহরীন বলেন, ‘আমি বাবা-মায়ের পাপেট (পুতুল) নই। আমাকে কেন গালি দেবে। আমাকে কেন তারা শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তা করে। আমি আমার সুরক্ষা চাই।
কালের আলো/এমএএইচএন