ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের কাছে ৫ আসনে ভাগ চাইবে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিতঃ 6:35 pm | February 27, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

ভোট নিয়ে জোট অটুট থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে ৫ টি আসন চাইবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ সফরকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের সেই ইঙ্গিতই দিয়ে গেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি।

এসব আসনে দলীয় প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠ গুছাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও চান শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দিতে।

তবে ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, আওয়ামীলীগের সঙ্গে জোট অটুট থাকলে এবার গতবারের আসনসমূহ বহাল রেখে আরো কয়েকটি আসন চাওয়া হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনই মন্তব্য করার সময় আসেনি।

সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় ময়মনসিংহ-৪ (সদর), ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা), ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) ও ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন পায় জাতীয় পার্টি। এসব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বেগম রওশন এরশাদ, সালাহউদ্দিন মুক্তি, এম.এ.হান্নান ও ফকরুল ইমাম।

তবে এমপি হবার পর থেকেই মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারান্তরীণ রয়েছেন এম.এ.হান্নান। তবে এবার তার পরিবর্তে এখানে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটাতে পারে দলটি। সেক্ষেত্রে মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ অথবা দেশের প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করে চমক দিতে পারে জাপা।

দলীয় সূত্র জানায়, মাস কয়েক আগে ময়মনসিংহ সফরকালে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি দলটি’র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দলীয় সাংগঠনিক অবস্থান ও ঘনিয়ে আসা সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।

সেখানে নিজেদের দখলে থাকা চারটি আসনের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া), ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) এবং ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনেও সমঝোতার ভিত্তিতে নিজ দলের প্রার্থীদের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে কথা হয়।

আলোচনায় উপস্থিত দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ১১ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত ৭ টি সংসদীয় আসন আওয়ামীলীগের কাছে দাবি করলে কমপক্ষে ৫ টি আসন ভাগাভাগিতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেইক্ষেত্রে নিজেদের দখলে থাকা চারটি আসনের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনটিকেও বেছে নেয়া হতে পারে।

তবে এ আসনটিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ৫ বারের বর্ষীয়াণ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন কিংবা জাসদের জাসদের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু’র মনোনয়ন সম্ভাবনা জোরালো থাকায় সেক্ষেত্রে ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর কিংবা ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের যে কোন একটি জাপাকে দিতেই হবে।

অবশ্য জাপার নেতারা জানান, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে দুই বার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরে যাওয়া বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: কে.আর.ইসলাম মান-অভিমান ভুলে আবারো জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

গত বছরের ০৪ আগষ্ট বেশ ঘটা করেই উপজেলা জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সভায় হাত তুলে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের দলীয় সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেও উল্লেখ করেন এমপি মুক্তি।

দলীয় সূত্রের মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশের রাজনীতির ইতিহাসে গণতন্ত্র ও দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রেক্ষাপটে রওশন এরশাদকে নিজেদের দখলে থাকা ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ।

এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পেয়ে ময়মনসিংহকে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

এ অঞ্চলের মানুষের প্রায় চার দশকের প্রাণের দাবি ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়নেও তার নেপথ্য ভূমিকায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও জোটের মনোনয়নের অপরিহার্যের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন এ নেত্রী।

একই সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে দলীয় সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি স্থানীয় আওয়ামীলীগের বিবাদমান কয়েকটি গ্রুপের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন।

এমনকি বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশেরও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে তার অনুকূলে। ফলে আসনটিতে জাতীয় পার্টির শক্তিশালী অবস্থানের কারণে জোটগতভাবে তাকেই প্রার্থী করে আসনটি নিজেদের দখলে রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দলটি’র হাইকমান্ড।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে রওশন ‘হয় বিরোধী নয়তো মন্ত্রী’

 

কালের আলো/এসএ/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email