বইয়ের ভুল চাহিদায় লাগাম টানছে এনসিটিবি, সাশ্রয় ২০০ কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ 10:31 am | May 28, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতের কাজ জোরেশোরে শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে এবার আগের মতো অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে বিপুল অর্থ অপচয়ের সুযোগ আর থাকছে না। জানা গেছে, নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে, যার ফলে অন্তত ২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা অফিসারদের পাঠানো চাহিদার ভিত্তিতে বই ছাপায় এনসিটিবি। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল যে, বাস্তব প্রয়োজনের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়। এই প্রবণতা রোধে এবার এনসিটিবি তিনটি পর্যায়ে তথ্য যাচাই করে প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণ করেছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ টিম গত জানুয়ারি মাস থেকে দেশের প্রতিটি জেলার তথ্য যাচাই শুরু করে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলা হয়, অতিরিক্ত চাহিদা পাঠালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষার্থী নিবন্ধনের তথ্যের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা মিলিয়ে দেখা হয়। তৃতীয় ধাপে এনসিটিবির নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩২টি ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করে এনসিটিবি সরেজমিন তথ্য যাচাই করে। এসব টিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ও সরবরাহকৃত বইয়ের হিসাব মিলিয়ে গড়পড়তা ২৫-৩০ শতাংশ বেশি চাহিদার তথ্য পান।
বিশেষ নজরে ছিল ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা। জানুয়ারিতে পাঠানো চাহিদার ভিত্তিতে যেসব বইয়ের প্রয়োজন দেখানো হয়েছিল, তা যাচাই করে দেখা যায় ৭৮ হাজার ৮৫০টি বইয়ের প্রয়োজন নেই, যা পূর্বের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম।
রাজাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তফা আলম জানান, এবার বইয়ের হিসাব শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ভিত্তিতে করা হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য বই ক্ষয় কিংবা নতুন ভর্তি বিবেচনায় ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ধরা হয়েছে, তবুও দেখা যায় আগের চাহিদার সঙ্গে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগে শুধু অর্থ সাশ্রয়ী নয়, দীর্ঘদিনের একটি অনিয়মের সংস্কৃতি ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর রিয়াদ চৌধুরী জানান, গত সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর বইয়ের সঠিক চাহিদা নির্ধারণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক জুম বৈঠক করে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, যারা অতিরিক্ত বইয়ের তথ্য দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন কঠোর বার্তা দেওয়ার পর থেকেই মাঠপর্যায়ে সঠিক তথ্য আসতে শুরু করে। আশা করি এই উদ্যোগ আগামীতে সুষ্ঠু বই বিতরণ সম্ভব হবে।
এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৬ সালের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৮ কোটি ৫২ লাখ বই এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৯৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২১ কোটি ৫৮ লাখ বই ছাপানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ১০ লাখ বই, যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪০ কোটি ১২ লাখ। অর্থাৎ এবার প্রায় ১০ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে নতুন কারিকুলাম বাতিল হওয়ায় দশম শ্রেণির ৫ কোটি ১৯ লাখ বই ছাপা হচ্ছে না। এছাড়া ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বাধ্যতামূলক না থাকায় সেখানেও ৪০ লাখ বই কমছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, দাখিল ভোকেশনাল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০০ কোটি ১৮ লাখের বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।
কালের আলো/এমডিএইচ