গুজব-কুৎসায় সশস্ত্র বাহিনীকে ‘বিতর্কিত’ করতে চায় কারা?

প্রকাশিতঃ 12:34 am | July 26, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

উপকারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানবিক উৎকৃষ্ট গুণ। একবার কৃতজ্ঞতা জানালে পরবর্তী সময়ে আবারও সাহায্য করতে উৎসাহী হওয়া স্বাভাবিক। এটি মানবিক মূল্যবোধকেও উজ্জ্বল করে। কিন্তু কৃতজ্ঞতার বদলে অবিবেচকের মতো উল্টো গুজব-কুৎসা রটিয়ে জাতির গর্ব, আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করতে লাশ গুমের কিচ্ছা-কাহিনী! সীমা ও শালীনতা না মেনে মানবিকবোধের বিসর্জনের ধারাবাহিকতা। সত্য তুলে না ধরে ডাহা মিথ্যাচারের এমন নির্লজ্জ বহি:প্রকাশ রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৩ প্রাণহানির আগে থেকেই বাড়বাড়ন্ত হয়ে ওঠে। স্বয়ং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন যখন বিনয়াবনত কণ্ঠে গুজব ও মিস ইনফরমেশনে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন-‘একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অপরিহার্য। দয়া করে গুজব ছড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের স্তম্ভ দুর্বল করে দেবেন না।’

কিন্তু তখনও সুযোগ সন্ধানীরা দানবীয়, তাঁরা ফুলস্টপ হননি। নীতি-আদর্শের পাশাপাশি রুচি, শালীনতা বা সৌজন্যবোধকেও ধুলায় মিশিয়েছেন। কোনো পক্ষ স্বার্থ হাসিলে, নিজের ইউটিউব ব্যবসার পালে হাওয়া দিতে কারও রাজনৈতিক ফন্দি হাসিলে কিংবা কারো চামচায়ে উজির নাজির হতে মুসাবিদা করে অথবা কর্পোরেট বাটপারি হাসিলের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে অস্থিরতা তৈরিতে সর্বগ্রাসী চেহারায় হাজির হয়েছেন। তথ্য আর অপতথ্যের ফারাকও ঠাহর করতে পারলেন না আবার নেটিজেনদের অনেকেই। মাইলস্টোনে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই জীবনবাজি রেখেই সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রাণান্ত লড়াই-দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর চিরায়ত উজ্জ্বল ভাবমূর্তিরই প্রতিচ্ছবি। যখন সেনা কর্মকর্তারা নিজের গর্বের পোশাক খুলে এক মৃত মায়ের সম্মান রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করছেন, উদ্ধার ও চিকিৎসা তৎপরতাও চালিয়েছেন সমান তালে ওই সময় ঘরপোড়ার মাঝে আলু পোড়া খাওয়ার মানসিকতা কার না হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে?

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্যদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ। উপকার স্বীকৃতি না দেওয়ার এই মানসিকতা অনেকের মধ্যে বিদ্যমান থাকলেও এসব না ভেবেই সরকারের নির্দেশের অপেক্ষা না করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়েই নেমেছিলেন সেনা সদস্যরা। দেশের প্রতিটি দুর্যোগে-সংকটে অতীতেও সশস্ত্র বাহিনী একইভাবে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মযজ্ঞে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

  • সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করতে তাদের নিয়ে গুজব ছড়ানোর কসরত থামেনি
  • নিত্য নতুন আয়োজনে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিশেষ বিশেষ পক্ষ
  • দেশের সার্বভৌমত্বের এই স্তম্ভকে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতেও হীন কায়দায় ঘায়েল করার অপপ্রয়াস
  • সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করলে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিই আখেরে লাভবান হবে

সশস্ত্র বাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী যেকোন কর্মকাণ্ড বরাবরই এড়িয়ে চলে তাঁরা। নিজের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষাসহ বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় তাঁরা প্রস্তুত রাউন্ড দ্য ক্লক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানকে স্বার্থক উপসংহারে পৌঁছে দিতে কার্যকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নব অধ্যায়ের সূচনা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার এ যেন গৌরবময় এক ইতিহাস। অভ্যুত্থান পরবর্তী কঠিন সময়েও নিজেদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কাজ করে চলেছেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য। একাধিকবার সেনাপ্রধান নিজের বক্তব্যে পরিস্কার করেছেন-রাজনীতি বা ক্ষমতা নিয়ে তাদের কোন আকাঙ্ক্ষা নেই। ক্ষমতার মোহ তাদের আকর্ষণ করেনি। কয়েক বার বলেছেন, রাজনীতিকদের বিকল্প কেবলই রাজনীতিক।

কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করতে তাদের নিয়ে গুজব ছড়ানোর কসরত থামেনি। নিত্য নতুন আয়োজনে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিশেষ বিশেষ পক্ষ। একের পর এক গুজবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আকথা-কুকথা ছড়ানোর মচ্ছব চলছে। দেশের সার্বভৌমত্বের এই স্তম্ভকে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতেও হীন কায়দায় ঘায়েল করার অপপ্রয়াস দৃশ্যমান হয়েছে একদিন-প্রতিদিন। সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করে জনতার আস্থা-বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে পারলে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিই যে আখেরে লাভবান হবে সেই হিসাব-নিকাশ কী কেউ কষেছেন? অন্ধকার তাড়িয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের একটি সুন্দর সোনালী ভোর নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর সর্বোচ্চ পেশাদার ও সুশৃঙ্খল এই বাহিনীকে নিয়ে অপরাজনীতির অপপ্রয়াস অতীতেও কখনও সফল হয়নি। হাল সময়ের ডিজিটাল জৌলুসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা অপেশাদারী ও অবিশ্বাসযোগ্য এই প্রবণতায় মেতেছেন তাঁরা ব্যাপক মাত্রায় এই প্ল্যাটফর্মটিকে ‘অসামাজিক’ ও কটুআক্রান্ত করে নিজেদের বিবেকের কাঠগড়ায় আসামি হিসেবে প্রকারান্তরে দাঁড় করিয়েছেন। অবান্তর, অবাস্তব ও আষাঢ়ে গল্প ছড়িয়ে গোলমাল বাধানোর এই নোংরামি দেশের সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষও ঘৃণাভরেই প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কালের আলো/এমএএএমকে