সরকার সদ্য জন্মগ্রহণ করা এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে: নুরুল হক

প্রকাশিতঃ 10:56 pm | July 25, 2025

কুমিল্লা প্রতিবেদক, কালের আলো:

অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পৃষ্ঠপোষকতা করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ জনগণের সামনে পরিষ্কার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই মন্তব্য করেন তিনি।

নুরুল হক বলেন, ‘এই সরকার সদ্য জন্মগ্রহণ করা এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দেশের অধিকাংশ সচেতন রাজনৈতিক মহল এবং সচেতন নাগরিকদের মতামত সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ জনগণের সামনে পরিষ্কার করেছে। আপনারা এরই মধ্যে দেখেছেন সরকার ১৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রধানদের সঙ্গে বসেছিলেন, সেখানে আমরাও ছিলাম। সেখানে সব রাজনৈতিক দলই সরকারের এনসিপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস স্যারের প্রতি সম্মান রেখেই রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন—আপনার সরকারের প্রতি আমরা এটা প্রত্যাশা করি না।’

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় থেকে এ দেশে অনেক কিংস পার্টি গড়ে উঠেছিল, আবার সেগুলো হাওয়ায় মিশে গেছে উল্লেখ করে নুরুল হক আরও বলেন, ‘পরশু দিনের আগে আপনারা দেখেছেন চারটি দলকে নিয়ে মিটিং করেছে এবং গণমাধ্যমে উপদেষ্টারা বলেছেন, তাঁরা চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মিটিং করেছে। একটি দল যেখানে নিবন্ধনই নেই, সদ্য জন্মলাভ করেছে, কত দূর যায় বা কত দিন রাজনীতিতে টেকে সেটাই তো এখনো জানা নেই।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘আমরা মনে করি এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকার সমান আচরণ করবে, সবাইকে সমানভাবে দেখবে। এরই মধ্যে কোনো কোনো দলের সমাবেশে দেখা গেছে জেলার বৃক্ষমেলা বন্ধ করে, পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি নতুন বাংলাদেশের চিত্র হতে পারে না। এমন আচরণ আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখেছি।’

মাইলস্টোনের ঘটনার পর সরকার ও প্রশাসনের দুর্বল চিত্র পরিষ্কার হয়েছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘মাইলস্টোনের ঘটনাকে পুঁজি করে পতিত সরকারের দোসররা ঢাকার রাজপথে নানা ধরনের নাশকতা ও অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তার একটি অংশ হিসেবে তারা কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করে সচিবালয়ের দিকে নিয়ে গেছে এবং সচিবালয় ভাঙচুর করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার ও প্রশাসনের একটি দুর্বল চিত্র আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। সচিবালয়ের মতো একটি সুরক্ষিত জায়গার নিরাপত্তা সরকার যদি দিতে না পারে তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে দেবে।’

এর আগে ‘গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক সমাবেশে বক্তৃতাকালে কুমিল্লার কয়েকটি আসনে গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী ঘোষণা করেন নুরুল হক। এর মধ্যে কুমিল্লা-২ আসনে নাজমুল হাসান, কুমিল্লা-৬ আসনে রাশেদুল হক রিয়াদ, কুমিল্লা-৭ আসনে গিয়াস উদ্দিন, কুমিল্লা-৯ আসনে আবদুল্লাহ, কুমিল্লা-৮ আসনে ফয়েজ উল্লাহ এবং কুমিল্লা-৫ আসনে মোকাম্মেল হোসেন। এ সময় আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ট্রাক প্রতীকে গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।

নুরুল হক বলেন, ‘গতকাল ঢাকায় ৩৬ জুলাই স্মরণে ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা এবং আজকের কুমিল্লার এই সমাবেশে আমাদের প্রার্থীদের পরিচয় করানোর মধ্য দিয়ে সারা দেশে আমাদের নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ শুরু হলো।’

কুমিল্লা জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এএএন