সময়গত বৈষম্য: পুঁজিবাদী বিশ্বে বিশ্রাম যখন বিলাসিতা
প্রকাশিতঃ 4:06 pm | May 26, 2025

ড. মতিউর রহমান:
আজকের পুঁজিবাদী বিশ্বে সময় কেবল ঘড়ির কাঁটার পরিমাপ নয়, এটি এক জটিল শ্রেণীভেদকারী শক্তি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, “সবারই ২৪ ঘণ্টা সময় থাকে”—কিন্তু এই সরল উক্তিটি বাস্তবের গভীর বৈষম্যকে আড়াল করে রাখে। সমাজবিজ্ঞানী জুডি ওয়াজম্যান (Judy Wajcman) তার বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, সময় কোনো প্রাকৃতিক বা নিরপেক্ষ ধারণা নয়, বরং এটি একটি সামাজিক নির্মাণ, যা লিঙ্গ, শ্রেণি এবং ক্ষমতার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ও গঠিত। একইসাথে, সাংস্কৃতিক তাত্ত্বিক জনাথন ক্র্যারি (Jonathan Crary) তার যুগান্তকারী “২৪/৭ ক্যাপিটালিজম” তত্ত্বে দেখিয়েছেন কীভাবে আধুনিক পুঁজিবাদ মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে, এমনকি তাদের মৌলিক বিশ্রাম ও নিদ্রাকেও, অধিকার করতে চায়।
এই দুটি দৃষ্টিভঙ্গি সম্মিলিতভাবে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কেন গিগ কর্মী, দরিদ্র মা এবং গ্রাম থেকে আগত শ্রমজীবীরা দিনের আলোতেও পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না, এবং রাতেও তাদের জীবন কাটে বিশ্রামহীন শ্রমে। এই পরিস্থিতি কেবল কাজের চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি এমন এক বাস্তবতা যেখানে মানুষ চাইলেও বিশ্রাম নিতে পারে না, কারণ জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো তাদের সময়গত স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সময়গত বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। একজন গার্মেন্টস কর্মী ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেন তার দিন, যা শেষ হয় গভীর রাতে। একই চিত্র দেখা যায় অ্যাপ-ভিত্তিক ডেলিভারি কর্মীদের ক্ষেত্রে, যারা দিনের আলো থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন। এর বিপরীতে, শহরের উচ্চবিত্ত শ্রেণি তাদের সময় কাটায় অভিজাত কফি শপে, বিলাসবহুল ক্লাবে বা নির্ভার নেটফ্লিক্স দেখে। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক উপার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সরাসরি সময়ের অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওয়াজম্যান যেমনটি দেখিয়েছেন, ধনী ও ক্ষমতাশালী মানুষরা তাদের সময়কে নিজেদের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যখন দরিদ্র শ্রেণি কেবল সময়ের পেছনে ছুটতে বাধ্য হয়, নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে।
ক্র্যারি তার তত্ত্বে ব্যাখ্যা করেন যে, পুঁজিবাদ এখন আর উৎপাদনের সীমানায় আবদ্ধ নয়, এটি মানুষের জীবনের প্রতিটি স্পন্দনকে, এমনকি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত নিদ্রা ও বিশ্রামকেও দখল করতে চায়। তিনি যাকে “২৪/৭ বিশ্ব” বলে আখ্যায়িত করেছেন, তা এমন এক বাস্তবতা যেখানে ঘুম ও অবসরের যেন কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই তত্ত্ব বাস্তবের মাটিতে যেন আরও বেশি স্পষ্ট।
ঢাকার মতো জনবহুল শহরে অ্যাপভিত্তিক রাইড-শেয়ারিং, অনলাইন ফুড ডেলিভারি, এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গিগ অর্থনীতি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো শ্রমিকদের সময়কে আক্ষরিক অর্থেই নিঃশেষ করে দেয়, কিন্তু বিনিময়ে তাদের কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেয় না। একজন রাইডার বা ডেলিভারি ম্যানকে প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, কারণ তারা জানে, যতক্ষণ তারা ‘অনলাইন’ থাকবে না, ততক্ষণ কাজ আসবে না, আর কাজ না এলে তাদের জীবন থমকে যাবে। এই অনিরাপদ কাজের ধারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন, স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গ্রাম থেকে আগত অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য এই সময়গত বৈষম্য আরও নির্মম। কুড়িগ্রাম, ভোলা বা নেত্রকোনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত এই মানুষগুলো ঢাকায় কাজের সন্ধানে এসে গার্মেন্টস, নির্মাণশিল্প বা হকার হিসেবে শ্রম দেন। তাদের জন্য বিশ্রামের ধারণাটিই যেন এক অলীক স্বপ্ন। তারা বসবাস করেন বস্তি বা ডরমেটরির মতো ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, যেখানে ঘুম মানে কেবল একটু চোখ বন্ধ করা মাত্র। তাদের নেই কোনো কাজের নিরাপত্তা, নেই পর্যাপ্ত বেতন, এবং নেই নির্ধারিত কাজের সময়। তাদের সময় আক্ষরিক অর্থেই বিক্রি হয়, কিন্তু তারা নিজেদের জীবনের সময়কে ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক অদৃশ্য চক্রে আবদ্ধ, যেখানে বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর শ্রম দিতে হয়, নিজেদের সুখ বা স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবার কোনো অবকাশ থাকে না।
নারী, বিশেষ করে দরিদ্র মায়েরা, এই সময়গত বৈষম্যের সবচেয়ে নির্মম শিকার। ওয়াজম্যান তার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখান, সময় একটি **লিঙ্গভিত্তিক কাঠামো**। বাংলাদেশে নারীরা শুধু ঘরের বাইরের কর্মক্ষেত্রেই কাজ করেন না, তারা বাসায় ফিরে সন্তান পালন, রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবারের অন্যান্য অসংখ্য কাজ সম্পন্ন করেন—যেগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য প্রায়শই অদৃশ্য থাকে এবং কোনো স্বীকৃতি পায় না। তাদের ঘুম প্রায়শই বিভক্ত, বিশ্রাম খণ্ডিত, আর মানসিক চাপ সর্বক্ষণ তাদের ঘিরে রাখে। ধনী পরিবারগুলো যেখানে গৃহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনের সহায়তা পায়, দরিদ্র মায়েরা সেখানে একাই পুরো সংসার টানেন, নিজেদের জন্য এক মুহূর্তও বিশ্রাম বা বিনোদন খুঁজে পান না। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে।
করোনাকালীন মহামারী এই বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তোলে। যখন সমাজের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ঘরে বসে সুরক্ষিত থাকতে চেয়েছিল এবং নিজেদের সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল, তখন গিগ কর্মীরা ছিল জীবন বিপন্ন করে পথে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে হাজার হাজার ডেলিভারি কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত মানুষ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তারা ‘জরুরি’ হয়ে উঠেছিলেন সমাজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সচল রাখার জন্য, কিন্তু কখনো ‘মূল্যবান’ হিসেবে বিবেচিত হননি। তাদের সময় ছিল অন্যের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্য, নিজেদের জন্য নয়। এই সংকটকাল স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, সমাজের একটি বড় অংশ কীভাবে অদৃশ্য শ্রম এবং অনিরাপদ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে অন্যদের বিলাসিতা নিশ্চিত করে।
পুঁজিবাদ শুধু শ্রমকে নয়, মানুষের স্বপ্নকেও কিনে নিয়েছে। গ্রামের তরুণেরা যখন কর্মসংস্থানের আশায় ঢাকায় এসে ফুড ডেলিভারি, রাইড শেয়ারিং বা ওয়্যারহাউসের কাজ বেছে নেয়, তখন তারা একধরনের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাস্তবে এই তথাকথিত ‘ফ্লেক্সিবল’ কাজ’ মানে নিরন্তর অনিশ্চয়তা, অবিরাম অনলাইন থাকা এবং বিশ্রামহীন জীবন। ওয়াজম্যান বলেন,‘হাস্টল কালচার’এখন গ্লোবাল হয়ে গেছে, যেখানে নিদ্রাহীনতা ও ক্লান্তিকে সাফল্যের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। সমাজ যেন এমন এক বার্তা দিচ্ছে যে, যারা বেশি সময় কাজ করবে, তারাই সফল হবে। অথচ, এটি শ্রমিকদের জন্য শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রান্তির মূল উৎস। এই সংস্কৃতি কেবল শ্রম শোষণকেই উৎসাহিত করে না, বরং এটি ব্যক্তির আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিনোদন কিংবা অবসর—যা একসময় মানুষের মানসিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি ভাবা হতো—আজ তা শুধুমাত্র ধনীদের জন্য এক বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। একজন গার্মেন্টস কর্মী বা একজন রিকশাচালক দিনশেষে টিভি দেখলেও সেটি প্রকৃত অর্থে বিশ্রাম নয়, বরং একটি স্বল্পমেয়াদি ভুলে থাকার চেষ্টা। এটি তাদের ক্লান্ত শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করার বদলে, সাময়িক পলায়নের একটি মাধ্যম মাত্র। অন্যদিকে, ধনী তরুণ-তরুণীরা বিলাসবহুল হোটেল, রিসোর্ট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অবসর সময় কাটায়, যা তাদের সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার প্রতীক হয়ে ওঠে। এই বৈষম্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক জীবনেই নয়, সময়ের সংস্কৃতিতেও স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। অবসর সময় কাটানোর ধরণও সমাজের শ্রেণিগত বিভাজনকে ফুটিয়ে তোলে।
শিক্ষাব্যবস্থাতেও সময়গত বৈষম্য গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় আয় করার জন্য, যাতে তাদের পরিবার বেঁচে থাকে। এই শিশুরা ছোটবেলাতেই শ্রমে যুক্ত হয়, তাদের শৈশব, তাদের সময় এবং তাদের ভবিষ্যৎ সবই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শিক্ষার মাধ্যমে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা যেতে পারত, তা তাদের জন্য অধরা থেকে যায়। অপরদিকে, বিত্তশালী পরিবারগুলোর শিশুরা সুপরিকল্পিত সময়চক্রে বড় হয়, তারা পর্যাপ্ত শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা পায়, যা ভবিষ্যতে তাদের আরও স্বাধীন ও সফল করে তোলে। এটি সমাজের বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং সামাজিক গতিশীলতা কে বাধাগ্রস্ত করে।
এই সময়গত বৈষম্য রোধে কেবল নীতিনির্ধারণই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সমাজের গভীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বিশ্রাম কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গিগ কর্মীদের জন্য সুরক্ষিত সময়, নির্ধারিত কাজের সময় এবং বিশ্রামের অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান শ্রম আইনকে আধুনিক করতে হবে, যাতে শ্রমিকরা ২৪ ঘণ্টার দাসে পরিণত না হন। প্রযুক্তির ব্যবহার এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে তা কেবল কাজের গতি না বাড়ায়, বরং মানুষকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগও দেয়। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী আরও শক্তিশালী করা উচিত, যাতে শ্রমিকরা অসুস্থ হলে বা কাজ হারালে একটি ন্যূনতম নিরাপত্তা পায়।
ক্র্যারি আমাদের সতর্ক করেন—পুঁজিবাদ যদি অনিরুদ্ধ হয়, তবে একসময় ঘুম পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ওয়াজম্যান আমাদের আহ্বান জানান—সময়কে পুনরুদ্ধার করার, বিশ্রামকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে মান্য করার, এবং এমন এক সমাজ গঠনের, যেখানে শ্রম নয়, মানুষই হবে প্রধান। শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ভাতা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরে, বিশেষ করে পরিবারে, নারী ও পুরুষের মধ্যে গৃহস্থালি কাজের সমবণ্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে নারীর উপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমে এবং তারা নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সরকার, শ্রম সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। সরকারকে এমন নীতি তৈরি করতে হবে যা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করে এবং তাদের ন্যায্য বিশ্রাম নিশ্চিত করে। শ্রম সংগঠনগুলোকে শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলতে হবে এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে তাদের ব্যবসার মডেল এমনভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে যাতে এটি মানবিক হয় এবং শ্রমিকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে। শুধু আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, আইনের সঠিক প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানুষকে বোঝাতে হবে যে, বিশ্রাম কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর অভাবে মানুষের উৎপাদনশীলতা ও জীবনযাত্রার মান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য, আমাদের সমাজের মৌলিক মূল্যবোধের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। পুঁজিবাদী সমাজের যে প্রবণতা কেবল মুনাফাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, তা পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের জীবন ও সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শ্রমকে কেবল একটি পণ্য হিসেবে না দেখে, মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মর্যাদার অংশ হিসেবে দেখতে হবে। এর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন, যেখানে শুধু অর্থনৈতিক সফলতার ধারণা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক সাম্যের গুরুত্বও শেখানো হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সময়গত বৈষম্য দূর করা অপরিহার্য। যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষ পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং অবসরের সুযোগ পাবে, তখনই তারা পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেদের মেধা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে, যা সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখবে।
সময় কেবল ঘড়ির কাঁটা নয়, এটি এক শোষণের পরিসর, যা আমাদের শ্রেণিভিত্তিক অবস্থানকে প্রকাশ করে। “কে বিশ্রাম পায়?” এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের বলে দেয়, সমাজে কে গুরুত্বপূর্ণ, কে দৃশ্যমান, আর কে স্বাধীন। বাংলাদেশে যখন রাত গভীর হয়, তখন কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমায়, আবার কেউ নিঃশব্দে রিকশা চালায়, গার্মেন্টসে কাটিং করে, বা খাবার পৌঁছে দেয়।
এই অসম সময়ে আমাদের বোঝা দরকার—সমাজ তখনই ন্যায়ভিত্তিক হবে, যখন সবাই সমানভাবে বিশ্রাম করতে পারবে। সময়ের ন্যায়বিচার ছাড়া, প্রকৃত সাম্য সম্ভব নয়। একটি মানবিক ও সাম্যবাদী সমাজের জন্য বিশ্রামকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।