সংসদে নারী আসন বৃদ্ধি-সরাসরি নির্বাচন চান সম্পাদকরা
প্রকাশিতঃ 6:48 pm | November 21, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জাতীয় সংসদে নারী আসন বাড়িয়ে সেগুলোয় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরা।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে এমন সুপারিশ করেন তারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংসদে নারী আসন বাড়িয়ে ১০০ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া দলের ভেতরে গণতন্ত্র কায়েম করার আইন করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আমার প্রস্তাব হচ্ছে অনাবাসী প্রতিনিধিত্ব হবে না। ঢাকায় থেকে খাগড়াছড়ি বা দিনাজপুরের প্রতিনিধিত্ব করবে না। এটা ওই এলাকা জনগণের বঞ্চিত করা। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে। অথবা তিনটি আসন মিলে একটি নারী আসন হবে, যেখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। সব নাগরিক যাতে তার পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে সেটা আমাদের চাওয়া।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, গণমাধ্যমকে গুরুত্ব দিয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে অনেক আগেই থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আইনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে দেখেছি যেভাবে প্রভাবিত করা হয়, সেই সুযোগ যেন না থাকে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এই সময়ে তো সম্ভব না। এটা সংসদ থেকে করতে হবে। কেননা, সেখান থেকে করতে না পারলে কার্যকর হবে না।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হয় দলীয় সরকারের অধীনে হলে তারা প্রভাবিত করে থাকে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে না হয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। এমন সিস্টেম যদি করতে পারি যে এনআইডি পাঞ্চ করে যদি জানতে পারি সে ভোটার কি না এবং ভোট দিতে পারবো কি না। কেননা, ভোটার লিস্ট হওয়ার ছয়মাস পর কিন্তু অনেকের ১৮ বছর হয়ে যায়। এতে তিনি কিন্তু ভোট দিতে বঞ্চিত হন। এক্ষেত্রে এনআইডি কার্ডকেই ভোটার কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভোটার লিস্টটায় সময় ও অর্থের অপচয় হয়।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি বলেন, সবার আগে তত্বাবধায়ক পুনর্বহাল করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনে যে সমস্যা হয়, তার ৮০ শতাংশ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। এটা সবার আগে ভাবতে হবে। এর সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনকেও ভাবতে হবে। তাদের প্রস্তাব সরকারকে দেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও দেওয়ার জন্য। এতে দলগুলো বা সরকার কতটুকু মানলো তা আমরা জানতে পারবো। আরেকটা বিষয় হলো নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দিতে হবে। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসনে নির্বাচন হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও যারা ভোটের দায়িত্ব পালন করেন তাদের আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেন জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়, তত্বাবধায়ক সরকার যেন থাকে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উদ্যোগসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ সিনিয়র সাংবাদিকরা করেছেন। আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি, কেননা, আমরা যা ভাবছি সে সকল বিষয়ই তারা বলেছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য যেমন বলেছেন, তেমনি গণমাধ্যম সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে যেন শাস্তি ব্যবস্থা করা হয়, সেই সুপারিশও করেছেন তারা। এনআইডির ভিত্তিতে যাতে ভোটার তালিকা করা যায় আমরা সেটাও বিবেচনা করছি। কেননা, এতে ভোটের আগের দিনও কেউ ভোটার হতে পারবে। অনেক সুপারিশ আসছে-ব্যতিক্রমধর্মী এবং সাংঘর্ষিকও। আমরা সবগুলো পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করবো।
ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১০০ আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেবেন। এতে সংসদে ৪০০ আসন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে প্রথমবার ১০০ আসনে, পরেরবার অন্য ১০০ আসনে এভাবে চারবারে চারশ আসনে নারীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করবে। আর অন্য আসনগুলো নারী ও পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কেরালায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই পদ্ধতি আছে। তবে বাস্তবে সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। নারীরা যাতে সকলের মতো প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো নয়, এমন প্রস্তাব তারা করেছেন। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা সুপারিশ করবো।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ