নিয়ম মেনেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৫০ কোটি টাকার দরপত্র অনুমোদন

প্রকাশিতঃ 10:25 pm | June 22, 2024

রাইসুল ইসলাম খান/ইয়াছিন আরাফাত, কালের আলো:

এমনিতেই বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারার দুর্নাম রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। ফলশ্রুতিতে নির্ধারিত সময়ে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২ দেশের আটটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনতে গত শনিবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি দরপত্রের ব্যয় মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আলোচিত প্রকল্পটির কাজ বঞ্চিত একটি প্রতিষ্ঠান নানামুখী অপপ্রচার শুরু করেছে। তাঁরা এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মন্ত্রী ও সচিবকে টার্গেট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অনলাইন-অফলাইনে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটিকে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ করছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

জানা যায়, ছুটির দিনেও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নজির রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এক্ষেত্রে নিয়ম কানুনের কোন ব্যত্যয় ঘটায়নি। সময়মতো শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনতে তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর দুটি (জিডি১ অ্যান্ড জিডি২) প্যাকেজ জাইকার অর্থায়নে এবং একটি (জিডি৩) প্যাকেজ সরকারি অর্থায়নে কেনা হবে। জাইকার অর্থায়নের প্যাকেজ দুটি কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্রুটি পাওয়ায় দরপত্র জমার এক বছর পরও কেনাকাটা সম্পন্ন হয়নি। সরকারি অর্থায়নের প্যাকেজটির জন্য তিনবার একটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। সব নিয়ম কানুন মেনেই গত শনিবার (১৫ জুন) মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি দরপত্রের ব্যয় মঞ্জুরি দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়মে উত্তীর্ণ হতে না পারা প্রকল্পের কাজ বঞ্চিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে ছুটির দিনে মন্ত্রণালয়ের কর্মযজ্ঞ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেদের অযোগ্যতাকে পাশ কাটাতে পরিকল্পিতভাবে প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রয়চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ার নীতিমালা মোতাবেক মন্ত্রণালয় ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন ও ব্যয় মঞ্জুরি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদনের শর্তও এখানে প্রতিপালিত হচ্ছে।

  •  বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারার দুর্নাম রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
  • মন্ত্রী ও সচিবকে টার্গেট করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা
  • প্রোপাগাণ্ডার নেপথ্যে কাজ বঞ্চিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান

জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব গত শুক্রবার ( ১৪ জুন) ওই নথিতে স্বাক্ষর করেন।নথিতে বলা হয়েছে, দেশের আটটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে সরকারি অর্থায়নে জিডি-৩ (রেডিওলজি, এন্ডোস্কপি অ্যান্ড পিএসিএস‍+আরআইএস ইকুইপমেন্ট) সংগ্রহে (৪৯ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ টাকার) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ, চুক্তিপত্র সম্পাদন ও ব্যয় মঞ্জুরি দিতে সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। সেখানে ১২টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি শর্ত হলো—এই অর্থ ব্যয়ে ভবিষ্যতে ত্রুটি বা অনিয়ম হলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দরপত্রের চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য যান্ত্রিক সক্ষমতা রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে বাধ্যতামূলকভাবে সিএমসি (কমপ্রিহেনসিভ মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্ট) করার নির্দেশনা রয়েছে। উল্লিখিত সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিএমসি প্রস্তাব সঠিকভাবে দাখিল করেছে। এতে কোনভাবেই সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দরপত্রটি সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মতামত দিয়েছেন। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নথিটি প্রস্তুত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা মূলত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অঙ্গুলী হেলনে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে নিয়ে বিষোদাগার করছেন। ক্রয় প্রক্রিয়াকে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের আলোকে বলেন, ‘ছুটির দিনে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সরকারি কার্যক্রমের বহু নজির রয়েছে। দরপত্রের শর্ত মেনে তিনবার সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছেন এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজ পেয়েছেন। ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে গেলে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের এন্ডেই থাকবে। রেডিওলজি, এন্ডোস্কপি অ্যান্ড পিএসিএস‍+আরআইএস ইকুইপমেন্ট দেশে আসার পর ভেরিফিকেশন ও সার্ভে হবে। তারপর টাকা রিলিজ করা হবে। এতে সরকারি অর্থের কোন ক্ষতিসাধণের সুযোগ নেই। তাছাড়া এই প্রকল্পের অবকাঠামো প্রায় সম্পন্ন, তাই যন্ত্রপাতি কেনা জরুরি ছিল।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম