ফুল চাষে বদলে গেল বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সাত্তারের ভাগ্য

প্রকাশিতঃ 4:57 pm | February 10, 2018

সুলতান আহমেদ, নওগাঁ থেকে:

সংসার জীবনে অনেক কষ্ট ছিলো। এখন আর সেরকমের কোন কষ্ট নেই। ফুল বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। এক সময়ের ফুল বিক্রেতা আঃ সাত্তার আজ নিজেই ফুল চাষী।

ফুল বিক্রি করে সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। ফুল চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম ইউপি’র দক্ষিণ মৈনম মোল্লা পাড়া গ্রামের মৃত বিরাজ উদ্দিনের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ সাত্তার (৬১)।

বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত আঃ সাত্তার ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর যাবৎ ফুল চাষ করছেন। শুরুটা ছিলো স্বল্প পরিসরে। কিন্তু গত ৩ বছর থেকে ব্যাপকহারে চাষ শুরু করেছেন এবং বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।

কিন্তু অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এক সময় আঃ সাত্তার নার্সারীতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করে সেগুলো বাজার জাত করতে করতে ফুল বিক্রেতাদের সাথে পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে ঐ সকল ফুল বিক্রেতাদের পরামর্শক্রমে দেশের বিভিন্ন জায়গা যেমন- খুলনা, দর্শনা, বগুড়া, নওগাঁ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ সংগ্রহ ফুল চাষ শুরু করেন।

শুরুতে লাভের পরিমান অনেক কম হলেও গত বছর ফুলের সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে এবং তা বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তিনি। এভাবে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি ও দাম ভালো পাওয়ায় আগ্রহ বেড়ে যায় আঃ সাত্তারের। দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে ফুল ব্যাবসায়ীরা ফুল নিয়ে যান। এছাড়াও প্রতিনিয়ত রাজশাহীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পর্যটনকেন্দ্রে ফুল খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করে থাকেন।

গোলাপ ফুল প্রতি ১০০টি ১৫০-২০০ টাকা, রজনী গন্ধা ১০০টি ২০০-২৫০টাকা, গাঁদা ১০০০টি ৩০০-৩৫০টাকা। সারা বছরই ফুল বিক্রি হলেও বিশেষ দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ, ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বরে ফুলের চাহিদা বেশী থাকায় দামও বৃদ্ধি পায়। একদিন পরপর জমি থেকে ফুল উঠাতে হয়।

আব্দুস সাত্তার বলেন, ২০১৩ সালে ফুল বিক্রি করে নওগাঁর ভীমপুর থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় ডান পায়ে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ঠিকমত সংসারের কোন কাজ করতে পারি না। নিজের বুদ্ধি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেকটা এগিয়েছি। ফুল চাষ করেই সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। পরিবারে ৫জন সদস্য। ছেলে ফুলের বাগান দেখাশুনা করে।

ফুল ব্যবসার লাভ থেকে বাড়ি করার প্রক্রিয়া চলছে। আব্দুস সাত্তার বলেন, এবার বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে ফুলের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। আর সে মোতাবেক প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ফুল প্রস্তুত করা হয়েছে। বাগানে গোলাপ, গাঁদা, মল্লিকা, চন্দ্র মল্লিকা, বোতাম ফুল, মরিচ পাতা, বিলাসমতি সহ প্রায় ১৮৩ প্রকার বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করেছেন।

আগামী বছরে রোপনের জন্য গোলাপের ভালো জাতের কাটিং চারা প্রস্তুত করা হয়েছে। আব্দুস সাত্তারের ছেলে আঃ সবুর মোল্ল্যা বাবু বলেন, এক সময় আমাদের সংসারে অনেক অভাব ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ফুল চাষ করার পর থেকে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তবে সরকারী ভাবে কোন অনুদান পেলে ভবিষ্যতে আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

 

কালের আলো/এসএ/ওএইচ