চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, এক পাইলটের মৃত্যু
প্রকাশিতঃ 12:12 pm | May 09, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি ইয়াকভলেভ ইয়াক ১৩০ (Yak-130) মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক পাইলট মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পাইলটের নাম স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আমানউল্লাহ। থাকতেন চট্টগ্রাম বিমানবাহিনী ঘাঁটি জহরুল হকের অফিসার্স আবাসিক এলাকার নীলিমা’তে। চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এদিন সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর বৈমানিকদ্বয় উইং কমান্ডার মোঃ সোহান হাসান খাঁন এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরী প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। বিমানের দুইজন বৈমানিককে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। বৈমানিকদ্বয়ের মধ্যে স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এছাড়া বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবাররের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে বিমানটিকে বিমান বন্দরের নিকট অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।
দুর্ঘটনায় পতিত বিমানটিকে উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এদিকেসহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল মুঃ কামরুল ইসলাম ঢাকা থেকে দূর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে এম শফিউল আজম দুর্ঘটনা পরবর্তী কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন।
বিমান বাহিনী প্রধান এর নির্দেশক্রমে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ’র সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত
স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ (বিডি/৯৬২৫), জিডি (পি) ২০ মার্চ ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার গোপালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডাঃ মোঃ আমান উল্লাহ এবং মাতার নাম নীলুফা আক্তার খানম।
তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে বিএসসি (এ্যারো) পাশ করেন।
স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ০১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। চাকরীকালীন সময়ে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘Chief of Air Staff’s Trophy for Best in Flying (Indian Air Force)’ অর্জন করেন।
চাকরীকালীন সময়ে তিনি দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
তাঁর কমিশন প্রাপ্তির পর চাকরীকাল ১২ বছর ০৫ মাস ০৯ দিন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ০১ মাস ২০ দিন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন
কালের আলো/এমএইচ/এসবি