চুরি পরানোর হুমকিতেও নামলেন না বিএনপি নেতারা
প্রকাশিতঃ 11:10 am | February 10, 2018

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নেননি বিএনপির বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতারা।
শুক্র ও শনিবার বিক্ষোভের ডাক দেয়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। কিন্তু এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা সেখানে ছিলেন না।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিএনপির ঘোষিত অন্যান্য কর্মসূচির তুলনায় কর্মী সংখ্যা বেশি ছিল। তবে আগের মতোই নেতাদের অংশগ্রহণের ‘অনীহা’ ছিল।
এমনকি খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে মানুষকে রাজপথে নেমে আসতে আহ্বান করা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও দিনভর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হননি।
প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় বিক্ষোভের আহ্বান করেছিলেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম এবং দলীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল ছাড়া অন্য কোথাও কর্মসূচি পালনের তথ্য গণমাধ্যমে আসনি।
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে প্রায় ১০ বছর আগে করা একটি দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দেয় একটি আদালত। গত ২৫ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতারা তীব্র আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। রায়ের আগ পর্যন্ত দলের স্লোগান ছিল ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’
রায়ের তারিখ ঘোষণা হওয়ার চারদিন পর গত ২৯ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে ঢাকা মহানগর বিএনপির এক আলোচনায় কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না নামলে বাসায় গিয়ে চুরি পরিয়ে দেয়ার হুমকি আসে।
বিএনপির সহযোগী সংগঠনের একজন নেতা সেদিন কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় নেতারা যারা সেই দিন রাস্তায় নামবেন না পরে তাদের বাসায় গিয়ে আমরা চুড়ি পরিয়ে দেবো। আমরা দলের সিনিয়র নেতাদের রাস্তায় দেখতে চাই।’
রায়ের পাঁচ দিন আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও জেলা পর্যায়ের নেতারা খালেদার সাজা হলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণের দাবি জানান। বলেন, তারা এবার ঢাকাতেও আন্দোলন দেখতে চান।
বৃহস্পতিবার রায়ে খালেদা জিয়ার রায়ের আগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী হঠাৎ তার বহরকে ঘিরে মিছিল করে। ওই বহরে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতারা।
রায়ের সময় আদালতে ছিলেন মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান।
শুক্রবার রাজপথে নামেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় কমিটির যারা অংশ নেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ।
মিছলে দেখা গেছে নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘খালেদা জিয়া জেলে কেন, সরকার জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সময় সেখানে কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে দেখা না গেলেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বারান্দা থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে হাত নেড়ে উপস্থিতির জানান দিতে দেখা গেছে।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানো এবং পরের বছর সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেননি বলে সমালোচনা আছে বিএনপিতে। তৃণমূলের নেতারা একাধিকবার এ নিয়ে তাদের অসন্তোষ জানিয়ে আসছিলেন।
মহানগর নেতাদের চুড়ি পরানোর হুমকির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মনে করি কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে থাকার দাবি সঠিক। কিন্তু বাস্তবতাও বুঝতে হবে। যেখানে পুলিশ আমাদের দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয় না। মিছিলে গুলি করে।’
‘আর আজকের যে কর্মসূচিটা ছিলো সেখানে কিন্তু কারো নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। বেশিরভাগ নেতা তার তাদের নির্বাচনী এলাকায়। তাই রাজধানীতে দেখা গেল কি দেখা গেল না সেটা তো বিষয় না। দবে আমি মনে করি দলীয় কর্মসূচিতে নেতারা সক্রিয় হলে কর্মীরা অনুপ্রেরণা পাবে।’