টিটুর ২৩ প্রতিশ্রুতি; আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের দৃঢ় প্রত্যয়
প্রকাশিতঃ 9:50 pm | March 03, 2024

রাইসুল ইসলাম খান অনিক, কালের আলো:
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) নন্দিত প্রথম মেয়র। প্রশাসক হিসেবে মসিকের গোড়াপত্তন তাঁর হাতেই। ময়মনসিংহ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র থেকে নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু এবারও ভোট করছেন মসিক মেয়র পদে। সিটির প্রথম মেয়র হিসেবে গত ৫ বছরে নগরীর বাসিন্দাদের সঙ্গে আন্তরিক হৃদ্যতা-সখ্যতা যেমন গড়েছেন তেমনি করোনা দহন বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জনপ্রত্যাশা পূরণে সক্ষমতা দেখিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন একদিন-প্রতিদিন। নাগরিকদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে থাকা টিটু স্বভাবতই ভোটের মাঠে চালকের অবস্থানেই রয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে পুরনো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। গড়তে চান একটি আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে ইকরামুল হক টিটু আগামী ৯ মার্চ টেবিল ঘড়ি প্রতীকে তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইশতেহারে নগরীর যানজট নিরসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কথাও। হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ও সিটি করপোরেশন করকে আরও সহনীয় করার অতি গুরুত্বপূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। ভোটারদের বিশ্বস্ত এ স্বপ্নসারথি অসমাপ্ত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে চান। সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান ৫টি অনলাইন সেবা ছাড়াও অন্যান্য সেবাসমূহকে ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি ৩৩টি ওয়ার্ডে স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত প্রকল্প অনুমোদন ও দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’ প্রথম মেয়াদে নিজের ৫ বছরের মেয়রের সময়কালে নগরীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা চলমান রাখার কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বলেছেন, ‘মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই প্রায় দুই বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দিয়ে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। তারপরও মাননীয় শেখ হাসিনার বদৌলতে ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলমান রেখেছি।’
কী আছে মেয়র প্রার্থী টিটুর ২৩ দফা ইশতেহারে?
সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক ময়মনসিংহ। স্বপ্ন যেখানে শুরু সেখানেই কাণ্ডারির ভূমিকায় মসিক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। জরাজীর্ণ জয়নুল উদ্যানের চেহারা পাল্টে করেছেন নয়নাভিরাম। শক্ত সড়ক অবকাঠামো থেকে শুরু করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক বাতিতে আলোকিত নগর সবখানেই টিটুর স্পর্শ। যেন বদলে যাওয়া এক নতুন সিটির গল্প। শীত-গ্রীষ্ম বারো মাস নগরীর বাসিন্দাদের কাছাকাছি-পাশাপাশি থেকেছেন। এরপরেও নিজের মেয়াদের অর্ধেক সময় করোনা আর বৈশ্বিক যুদ্ধে খাবি খেয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের প্রশ্নে যেন একটু অপূর্ণতাই থেকে গেছে ইকরামুল হক টিটুর। ফলে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ময়মনসিংহ সিটি গড়ে তোলার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বন্দরে নোঙর করতে ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ইকরামুল হক টিটু। ইশতেহারে বলা হয়েছে- নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে সিটির আওতাভুক্ত সড়কসমূহ প্রশস্তকরণ দাখিলকৃত ও প্রধান সড়কের মোড়সমূহ প্রশস্তকরণে প্রকল্পসমূহ অনুমোনের মাধ্যমে বিদ্যমান যানজট নিরসন ও বিশেষজ্ঞকে মতামতের ভিত্তিতে ওভারপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ। যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা প্রশস্তকরণ, রেলপথ বিভাগের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ ট্রাফিক বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে সকল বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ।
নগরীর প্রবেশদ্বারে তিনটি বাস টার্মিনাল ও একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাখিলকৃত প্রকল্প দ্রুত অনুমোনের মাধ্যমে নগরীর যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ। নগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে চলমান রাস্তাসমূহ পাকাকরণ প্রকল্প দ্রুত সম্পন্নকরণ ও নতুন-পুরাতন সকল ওয়ার্ডের সমস্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট দ্রুত নির্মাণ। নগরীর খালসমূহ দখলমুক্তকরণের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের চলমান ড্রেনেজ নির্মাণ প্রকল্পসমূহ দ্রুত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ও ট্রেড লাইসেন্স ফি যুক্তিসংগত ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সিটি করকে আরও সহনীয় করতে নাগরিকবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী গড়ার লক্ষ্যে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্মাণাধীন প্ল্যান্ট দ্রুত বাস্তবায়ন ও অন্যান্য কার্যক্রমসমূহ আরও জোরদার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি নগরীর সর্বত্র দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রক্রিয়াধীন প্রস্তাবিত দ্রুত অনুমোনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ। বিভিন্ন অপতৎপরতা রোধ করে আলোকিত নগরায়ণের লক্ষ্যে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে চলমান ‘সড়ক বাতি’ স্থাপন প্রকল্প দ্রুত সম্পন্নকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসমূহ সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা ও অন্যান্য নাগরিক সেবাসমূহ জনগণের নিকট সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করা।
নাগরিক সেবা আরও সহজলভ্য করতে প্রস্তাবিত আধুনিক ‘নগর ভবন’ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও নাগরিক সেবাসমূহ ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে নানাবিধ যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ও সবুজ নগরায়ণের লক্ষ্যে রাস্তার দুই পাশে ও খোলা জায়গা পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ ও জলাধার নির্মাণ এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ। নগরবাসীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চলমান চারটি নাগরিক সেবাকেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি ও দুটি নির্মাণাধীন হাসপাতাল দ্রুত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
ইশতেহারে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এ প্রার্থী। তিনি উল্লেখ করেন, নগরবাসীর বেকারত্ব রোধে নারী-তরুণদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। বেকারত্ব রোধে ময়মনসিংহ নগরীকে শিল্পনগরী ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ। বর্ধিত নতুন এলাকাসমূহে নগর বিন্যাসের পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আগামী নগরীকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা। নগরীর প্রত্যেক এলাকায় সহজাত তারুণ্যের বিকাশে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠন এবং পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরিকরণে সহযোগিতা প্রদান। বিভাগীয় সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
ইশতেহারে আরও বলা হয়- শিশুদের শারীরিক বিকাশের জন্য প্রস্তাবিত ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও ‘বিপিন পার্ক’ আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ। সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কবরস্থান, শ্মশান ঘাটসমূহ আরও সুবিধা সম্বলিত উন্নতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। মাদকসেবন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হতে বিরত রাখতে যুবসমাজের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান। সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান পাঁচটি অনলাইন সেবাসমূহ ছাড়াও অন্যান্য সেবাসমূহ ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়া এবং তেত্রিশটি ওয়ার্ডে স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ। বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সম্মানিত নাগরিকদের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও উল্লেখ করা হয় ইশতেহারে।
কালের আলো/আরআই/এমকে