ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি

প্রকাশিতঃ 8:51 pm | October 23, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার স্টেশনের আউটারে দুই ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগি থেকে একে একে বের করা হচ্ছে মরদেহ। সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে র‌্যাব ও বিজিবি।

এর আগে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এগারসিন্ধুর গৌধূলির দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত বগি থেকে প্রথমে দশজনের এবং পরে একে একে আরও ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মূলত ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেন সিগন্যাল না মানায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা জানান, এগারসিন্দুর ট্রেনটি ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পরপরই স্টেশনের আউটারে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এছাড়াও উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরদপ্তর থেকে ২৩ জন, নরসিংদী থেকে ১০ জন, বেলাবো থেকে তিনজনসহ মোট ৩৬ কর্মী রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভৈরবে দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা র‌্যাব-৯ এর এএসপি গোলাম মোহাম্মদ বলেন, আমরা ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানতে পেরেছি। বাকি হতাহতদের উদ্ধারে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হচ্ছে।

বগির নিচে চাপা পড়ে আছে অনেকে
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের তিনটি বগির নিচ থেকে একে একে মরদেহ বের করা হচ্ছে। এখনো অনেকে বগির নিচে চাপা পড়ে আছেন। ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোশাররফ হোসেন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত এগারসিন্দুর গোধূলির তিনটি বগি থেকে একে একে মরদেহ বের করা হচ্ছে। বগির নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতেও উদ্ধার কাজ চলবে। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট হতাহতদের উদ্ধারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে হাজারো উৎসুক জনতা ভিড় করেছে। উপস্থিত হয়েছেন দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে থাকা যাত্রীদের স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, স্টেশন মাস্টারের অবহেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকারীরাও দেরিতে ঘটনাস্থলে এসেছেন।

ট্রেনের চালক-গার্ড বরখাস্ত
ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক), সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান। তিনি আরও জানান, ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবস এবং চট্টগ্রাম জোনের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় বিভাগীয়ভাবে দুইটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশের রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সিরাজ-উদ-দৌলা খান জানান, ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় রেলওয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকমেটিভ, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এবং বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে আছেন— রেলওয়ের সিওপিস মো. শহিদুল ইসলাম, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, আরমান হোসেন, সিএসপি তুষার ও চিফ মেডিকেল অফিসার আহাদ আলী সরকার।

বিভিন্ন স্টেশনে আটকা ৫ ট্রেন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও চলছে উদ্ধার কাজ। এ দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে পাঁচটি আন্তনগর ট্রেন। ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি মিলে উদ্ধার কাজ চালালেও এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে কতক্ষণ লাগতে পারে তাও জানাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস (৭৭৩), সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭১০) ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস (৭১৮), ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস (৭১২) এবং চট্রগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস (৭৮৫) বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে আছে। এছাড়াও শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে আরও অন্তত আটটি আন্তনগর ট্রেন। এসব ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীরা কখন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিংবা সংশ্লিষ্ট রুটে কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে তা জানাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আটকে পড়া এসব ট্রেনের যাত্রীরা দীর্ঘসময় ট্রেনে বসে থেকে অনেকেই অন্য উপায়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে হেল্পলাইন নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে আটকে পড়া এসব ট্রেনের যাত্রীরা এমনটি লিখেছেন।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউ