২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চান যুবলীগ চেয়ারম্যান
প্রকাশিতঃ 9:43 pm | March 25, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
শনিবার (২৫ মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘কালরাত্রি স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, সভ্যতার ইতিহাসের ভয়ঙ্কর একটা রাত, ২৫ মার্চের কালরাত। অষ্ট্রেলিযার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকা অনুযায়ী শুধুমাত্র ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে, ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। সেই থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে শুরু হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
তিনি বলেন, আর ঐই দিনের হত্যাকাণ্ডের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল আমাদের দেশেরই রাজাকারদের দল। নিজের পরিবার, প্রতিবেশী অথবা নিজ দেশের নাগরিকের উপর পরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সহযোগিতা করে মানুষ হিসাবে ওরা সমগ্র মানুষ জাতিকে কলঙ্কিত করেছে, ছোট করেছে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের সৌভাগ্য আমাদের দেশে জন্মেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যার অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদ ও সাহসী সংগ্রামের ফলে আমরা আমাদের এদেশের মানুষকে ঐ সকল হায়নাদের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আজকের অনেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলছে। তাদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, ১৯৭১ সালে যখন রাজাকার, আলবদর, আল-সামস বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নি সন্ত্রাস করেছে তখন এই সকল প্রশ্রয়দাতাদের ভূমিকা কি ছিল? নিশ্চয়ই তারা প্রশ্রয় দিয়েছেন। কেন এখোনো ২৫ মার্চ গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় না? এসব ব্যাপারে তারা কি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে? বা প্রতিবাদ করে? আমি সেটা জানতে চাই। এমনকি ২০০১ সালেও ঐ জামাত-বিএনপি সরকার যখন সেই পাকিস্তানী কায়দায় যখন আমাদের হিন্দু ভোটারদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়া দিয়ে তাদেরকে উৎখাত করেছিল. তখনো কি এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক এবং বাহকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন? বাংলাদেশে প্রায় এক যুুগের বেশি সময় যে অগণতান্ত্রিক মিলিটারি শাসকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছিল।
‘সে ব্যাপারে এবং সেই সময়ও কি তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে সরব ছিল? ১৫ই আগস্টে যখন নারী শিশু হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল কিনা, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। কেন এখনো ২৫ মার্চের হত্যাকা- আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তরুণ প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাঁর উদার গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে। তা না হলে আমরা একটা উন্নয়নশীল, মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারব না।’
শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটা সুখী-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে এবং একই সাথে শুধু দেশপ্রেমী নয়, বাঙালি সংস্কৃতির ও ইতিহাসের অনুরাগী হতে হবে। শুধু আবেগ নির্ভর রাজনীতি নয়, নৈতিক এবং যুক্তিশীল রাজনীতি করতে হবে। একই সাথে বাঙালি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। নিজেকে জানতে হবে এবং আত্মসমালোচনাও করতে হবে। কেবল তাহলেই শহীদের আত্মত্যাগের সম্মান আমরা দিতে পারব। ভুলে গেলে চলবে না, এদেশ সহজে স্বাধীন হয় নাই, বহু বাঙালির মা-বাবা, ভাই-বোনদের রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং একই সাথে দায়িত্বশীল হতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মৌলবাদী ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে প্রতিহত করে একটি প্রগতিশীল বিজ্ঞান-ভিত্তিক, গঠনমূলক রাজনীতি তরুণ প্রজন্ম বেছে নিবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন– আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, স্বাধীনতা পুরষকারপ্রাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ।
কালের আলো/এসবি/এমএম