রোজায় ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়ার আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 8:54 pm | March 14, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

রোজার মাসে ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, রমজানে সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো যখন বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেয়, তখন আমাদের ব্যবসায়ীরা উল্টো দাম বাড়িয়ে দেন। তাই প্রধানমন্ত্রীও ব্যবসায়ীদের সংযমী হতে বলেছেন।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে কাওরান বাজারের টিসিবি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

টিপু মুনশি বলেন, জেল-জরিমানা করে ও শাস্তি দিয়ে বাজার সামলানো যায় না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াতে সব সময় সক্রিয় থাকেন। তাদের নিজেদের শোধরানো উচিত।

বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা এক দিনের মধ্যে সে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, কিন্তু দাম কমলে তার সুফল ভোগ করতে ক্রেতাকে কম করে হলেও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ব্যবসায়ীদের মানসিকতার সমস্যা।

রমজান মাসে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে তিন কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন। আমাদের উদ্দেশ্য পাঁচ কোটি মানুষকে টিসিবির আওতায় নিয়ে আসা। এতে করে গরিব মানুষ ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাবেন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চাই। তবে এরপরেও যদি বাজারগুলোতে পণ্যের দাম বেশি রাখা হয়, তাহলে তাদের বাজার কমিটির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

এখন পর্যন্ত কোনো বাজার কমিটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে কি না কিংবা কোনো ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও রাজধানীর কাপ্তানবাজারে মুরগির দাম বেশি রাখা হয়েছিল। তাদের ভোক্তা অধিকার থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরে মুচলেকা দিয়ে তারা পার পেয়েছেন।’

এদিকে বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনায় জনবল কম থাকার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের জনবলের সীমাবদ্ধতা আছে এ কথা আমরা স্বীকার করি। তবে ইতিমধ্যে ভোক্তা অধিকারে নতুন ১৪৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা আরও লোক চেয়েছি। শিগগিরই আরও ৪৬৫ জন নতুন লোক পাবো বলে আশা করি।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল বুধবার (১৫ মার্চ) বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিরাপদ জ্বালানি, ভোক্তাবান্ধব পৃথিবী’।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকের ঊর্ধ্বগতি নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন, নিরাপদ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির যোগান একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। জাতীয় সমৃদ্ধি, ভোক্তা অধিকার রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভেজাল ও মজুতদারি প্রতিরোধ, বাজার ব্যবস্থার সার্বিক তদারকির পাশাপাশি ভোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ জ্বালানির বিপণন ও বাজার ব্যবস্থাপনায়ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

সকল ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের প্রত্যেককেই নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আমাদের সরকার ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়ন ও আইনের সফল বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। অধিদপ্তরটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ এবং ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নকল ও ভেজাল রোধে অধিদপ্তর নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিষ্ঠার সাথে যথাযথ ভূমিকা রাখবে।

কালের আলো/এসবি/এমএম