দীর্ঘ বিরোধের জেরে পিরোজপুরের ইউপি সদস্যকে হত্যা
প্রকাশিতঃ 8:45 pm | November 05, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি গাজী সিদ্দিকুর রহমানকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, নিহত ইউপি সদস্য মামুনের সঙ্গে গ্রেফতার সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল ও ভাতিজা আসাদুলের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডাও হয়। শত্রুতার জেরে সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে মামুনকে খুন করা হয়।
শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে দশটার দিকে পিরোজপুরের কাউখালীর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কুপিয়ে বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে, শরীর ও মুখমন্ডল ক্ষত বিক্ষত ও বিকৃত করে নৃশংসভাবে খুন করে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগী আরও ১০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে র্যাব এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর ইউপি সদস্য হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি গাজী সিদ্দিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিদ্দিক ইউপি সদস্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত মামুন হাওলাদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুর, তার ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুল এর দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কারণে বিরোধ চলে আসছিল।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ২০১১ সালে নিহত মামুনের আত্মীয়র জনৈক নারীকে ধর্ষণ করার দায়ে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুরের ভাই কামাল এবং ভাতিজা আসাদুলের বিরুদ্ধে নিহত মামুন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি কামাল এবং আসাদুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার হয়। এরপরে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা নিহত মামুনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা শুরু করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত মামুনের সঙ্গে ল গ্রেফতার সিদ্দিকুর ও কামালের বিভিন্ন সময় বাকবিতণ্ডা হয়। এই শত্রুতার জের ধরে গ্রেপ্তার সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে কামাল, আসাদুল এবং তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী মিলে ভিকটিম মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সিদ্দিকুর, কামাল, আসাদুল এবং সজল জমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন মোল্লারহাট বাজারে সিদ্দিকুরের অফিসে একত্রিত হয়ে হত্যার নীলনকশা তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিহত মামুনকে কৌশলে মোটরসাইকেলে করে উত্তর ভিটাবাড়িয়ার একটি স্থানে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয় সজল জমাদ্দারকে এবং কামাল ও আসাদুলসহ অন্যান্যদেরকে ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে ভিটাবাড়ী এলাকায় গাছ ফেলে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সজল জমাদ্দারকে পিটিয়ে আহত করার কথা বলা হয় যাতে করে বিষয়টি নিয়ে জনমনে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি না হয়। সিদ্দিকুর ঘটনার পরপরই পালিয়ে প্রথমে পিরোজপুর এবং পরে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় আত্মগোপন করেন। এরপর সে অবস্থান পরিবর্তন করে রাজধানী থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন এলাকায় আত্মগোপন করে।
কে এই গ্রেপ্তার গাজী সিদ্দিকুর রহমান
গাজী সিদ্দিকুর রহমান ১৯৮৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসে তার এলাকার জনৈক ঠিকাদারের সঙ্গে তার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এ সময় সে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করত। ২০০২ সালে সে তার ঠিকাদারীর কাজ ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে ফিরে যায়। গ্রামে ফিরে গিয়ে সে মুরগীর ফার্ম এবং মাছের ব্যবসা শুরু করে।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালে স্বতন্ত্রভাবে শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ২০১১ সালের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন ধরণের বিরোধের জের ধরে তার নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলাসহ প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগও করেছে।
নিহত ইউপি সদস্য ও গ্রেপ্তার মামুনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।’
কালের আলো/এসবি/এমএম