পার্বত্য দুর্গম এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নিরুদ্দেশ যুবকরা : র‌্যাব

প্রকাশিতঃ 4:06 pm | October 10, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। এরা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। তবে এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানে যে, তাদের সন্তান চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা আবার নিয়মিত পরিবারকে অর্থও দেন। মূলত এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা দেশের দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম অঞ্চলে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নিখোঁজ তরুণরা। এ বিষয়ে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যগুলো দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে রবিবার রাতে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটির নেতা হাবিবুল্লাহসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের মধ্যে নিরুদ্দেশ তিন যুবক রয়েছেন। তারা হলেন- শাহ মো. হাবিবুল্লাহ, নেয়ামত উল্লাহ, মো. হোসাইন, রাকিব হাসনাত ও মো. সাইফুল ইসলাম।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, হাবিবউল্লাহ দুই বছর আগে নেয়ামতউল্লাহর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য হন। তখন থেকেই হাবিবউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে।

তিনি বলেন, তিনি এই সংগঠনের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারীও। বিভিন্ন মাদ্রাসার কথা বলে চাঁদা তুলে তিনি সংগঠনে দিয়েছেন। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাতজন ছাত্রকে রিক্রুট করা, ব্রেইন ওয়াশের দায়িত্ব ছিল হাবিবউল্লাহর। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেছেন।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে কিছু বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিখোঁজদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তারা নতুন ওই জঙ্গি সংগঠনের নামেই অবস্থান করছে। নিখোঁজদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

‘তাদের নাশকতার কী পরিকল্পনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে। আরও গ্রেপ্তার হলে তারপরে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বলা যাবে।’

কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ অগাস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার। পরে জানা যায়, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়ে’ লাপাত্তা হয়েছে ওই তরুণরা।

তাদের মধ্যে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর গত ৬ অক্টোবর র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত।

ওই সাতজনের কাছ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, জঙ্গি সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ’, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছিল।

হাবিবুল্লাহর বাড়ি কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের লইপুরা এলাকায়। কুমিল্লা শহরের কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর সেখানেই শিক্ষক ছিলেন তিনি। পরে কোবা মসজিদের ইমাম হিসেবে যোগ দেন। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করতেন তিনি।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email