তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 4:52 pm | July 30, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবপাচার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মো‌মেন বলেছেন, আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে মানবপাচার রোধ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে মানবপাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

শনিবার (৩০ জুলাই) হো‌টেল ইন্টারক‌ন্টি‌নেন্টা‌লে ‘বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে আইওএম (আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা) আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারকর্মী এবং একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই, আমরা জানি কেন, তাই ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং চাকরির সুযোগের ব্যবধান কমাতে সাহায্য করার জন্য আমাদের সবার, বিশেষভাবে উন্নত দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। শুধু পরামর্শের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত নয়। আরও কাজের সুযোগ তৈরিতে আমাদের সাহায্য করা উচিত। এটি মানুষের প্রবণতা, ঠিক যেমন পানি উঁচু থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এ ক্ষেত্রে উন্নত জীবনযাপনের জন্য দরিদ্র দেশ থেকে মানুষ ধনী দেশে যায়।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি বন্দুকের মতো; এটা যদি অপরাধী ও হত্যাকারীর হাতে থাকে, ইস্যু ভয়ঙ্কর হতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ইতোমধ্যে মানবপাচার রোধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিস্তৃতভাবে ৪টি বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে—সচেতনতা তৈরি, রিপোর্টিং, উদ্ধার ও পাচারকারীদের বিচার।

ড. মোমেন বলেন, সরকার, বিশেষত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে আমাদের মিশনগুলো এই ৪টি ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছে। সচেতনতা শুধুমাত্র সুশীল সমাজের নেতাদের মধ্যে নয়, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের পৌরসভা মিলনায়তনে মানবপাচার রোধ এবং নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য অংশীজনদের সহযোগিতায় টাউন হল সভা করেছে। যেসব এলাকা মানবপাচারে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত সেখানেও আমরা একইভাবে কাজ করছি।

তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের মিশনগুলো সচেতনা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে, প্রবাসীকর্মীরা যেন পাচারকারীদের খপ্পড়ে না পড়ে। আমরা দেশে এবং বিদেশে কনসুলার এবং কল্যাণ পরিষেবা দিতে একটি গতিশীল মোবাইল অ্যাপ দূতাবাস চালু করেছি। জরুরি সহায়তার ক্ষেত্রে, নাগরিকরা ৩ সেকেন্ডের জন্য এসওএস বোতাম চেপে ধরে রাখলে জরুরি সহায়তার অনুরোধ তার পূর্ব-নিবন্ধিত তথ্য বাংলাদেশ মিশনে চলে যাবে।

‘আমাদের প্রতিটি মিশনে ২৪ ঘণ্টার জন্য হটলাইন চালু রয়েছে। বিদেশে যে কোনো পাচারের ঘটনা ঘটলে হটলাইনের মাধ্যমেও জানানো যাবে। দেশে এমন ঘটনা ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে না গিয়েও তথ্য সহজেই জানানো যাবে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেওয়া হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশে মিশন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখে। আইসিটি-এর কারণে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আরও ভালো এবং দ্রুত সমন্বয় করতে পারি এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে পারি। এমনকি প্রতিটি ঘটনায় বিবেচনায় যদি ভুক্তভোগী দুর্গম অঞ্চলে থাকে তাকেও জরুরি সহায়তা যেমন চিকিৎসা, খাবার এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমরা পাচারের শিকার আড়াই হাজার ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছি। প্রযুক্তি আইন-শৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য মানবপাচাকারীদের ওপর নজরদারি সহজ করে দিয়েছে। অপরাধীদের শনাক্ত ও আটক সহায়ক হয়েছে। তাদের বিচারের আওতায় আনাও সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ মানবপাচারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করছে। মানবপাচার রোধে সরকারের আন্তরিক তৎপরতা ২০২০ ও ২০২১ সালের মার্কিন প্রতিবেদনের প্রশংসিত হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাদক ও মানবপাচার কমিয়ে আনতে আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে চেয়েছি। যদি পরবর্তীতে পশ্চিমা ক্ষমতাসীনদের অনুরোধে তা সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাচারকারীরা আরও বড় ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু সরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যকরভাবে মানবপাচারকারীর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে মানবপাচার একটি আন্তঃসীমান্ত অপরাধ এবং পাচারকারীরা একটি নির্দিষ্ট দেশে উপলব্ধ প্রযুক্তির চেয়ে ভালো প্রযুক্তির অধিকারী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, উন্নত দেশ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মানবপাচার কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে হবে।

কালের আলো/বিএস/এমএম

Print Friendly, PDF & Email