ইউরোপের ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে র‍্যাবের হাতে ধরা

প্রকাশিতঃ 4:40 pm | July 18, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে চাকরির প্রলোভনে ভুয়া ভিসা-নকল বিএমইটি কার্ড দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালামকে (৪১) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

রোববার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ১৪টি পাসপোর্ট, ৬টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্টার ও ডায়েরি জব্দ করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ভুয়া ভিসা-নকল বিএমইটি কার্ড দেখিয়ে বেকার যুবক-যুবতিদের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতো এই চক্র।

ভুক্তভোগীরা ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড নকল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিত। গত তিন বছরে চক্রটি ৩০০ লোকের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালামকে গ্রেফতারের পর সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে, পল্টন এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বশান্ত করেছে।

সহজ-সরল বিদেশ গমনেইচ্ছুক ব্যক্তিরা ওই ভুয়া ভিসা ও বিএমইটি কার্ড বিমানবন্দরে প্রদর্শন করার পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এ রকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আবুল কালাম সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছে।

এছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক-যুবতিদের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীরা ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ওই ভিসা ও বিএমইটিকার্ড নকল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলে আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গত তিন বছরে চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধ-শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে দেশে ফিরে আসে। এরপর তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ ও প্রতারণা শুরু করে।

আবুল কালাম প্রথমে ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেয়। এরপর ভিসা, টিকিট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের আস্থা অর্জনের জন্য দুই একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠান।

তাদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। শুধুমাত্র এই নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু অভিযুক্তরা তাদের অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন। এরপর তাদের ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য পুনরায় টাকা দাবি করে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে আবুল কালাম।

চক্রটির আরও ৬-৭ জন সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত। বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এমন মূলহোতা এর আগেও গ্রেফতার হয়েছে। এরপরেও এমন প্রতরণা থামছে না কেন। এমন এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যারা বিদেশ যেতে চান তাদের কিছুটা সচেতন হতে হবে।

‘জনশক্তি রপ্তানির সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে হবে। সহজ উপায়ে বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য দিতে হবে।’

কালের আলো/ডিএস/এমএম