কৃষিতে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে সেনানিবাসের পতিত জমি, উৎপাদন বাড়ানোয় নজর সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 11:04 pm | May 12, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেই নিজেদের কর্মকান্ডে কৃষিকে যুক্ত করে সবুজ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

আরও পড়ুনঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলের নামফলক উন্মোচন করলেন সেনাপ্রধান

ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সব এরিয়ার অনাবাদি পতিত ও অব্যবহৃত জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নিশ্চিত করা হচ্ছে কৃষি কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহারও। ফলত এক সময়কার পতিত জমি পেয়েছে আবাদি জমির চেহারা। প্রতিটি বাসা-বাড়ির আনাচে-কানাচে বনজ, ওষধি ও ফলের গাছ লাগানো হয়েছে।

উন্মুক্ত স্থানে চাষ হচ্ছে নানা জাতের মৌসুমী ও বারোমাসি ফল। আবার, পুকুর ও জলাভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে মাছ এবং হাঁস চাষের জন্য। বিভিন্ন প্রকার খামার ছাড়াও বায়োফ্লক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে শিং ও তেলাপিয়া মাছ।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) সাভার এরিয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী পদক্ষেপ এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় সকল সেনানিবাসে কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং বাণিজ্যিক কৃষিতে উত্তরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই প্রয়াস আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সময়োপযোগী কার্যকর এই উদ্যোগের ফলে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দেশকে নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতেও রাখবে ইতিবাচক ভূমিকা। বাড়াবে শস্য নিবিড়তাও।

করোনা মহামারির দু’টি ভয়াল ঢেউ’র পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্ব। ফলে সামনের দিনে খাদ্যশস্য বিশেষ করে দানাদার খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সীমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশের আলোকে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী কৃষিকে একটি টেকসই রূপান্তর করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার এ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে মোট ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার শতক। এর মধ্যে অস্থায়ী পতিত এবং স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার শতক।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন ও সাভার এরিয়া কৃষি উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বয়ং সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন নিজ বাহিনীর এই এরিয়ার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, কৃষিপণ্য উৎপাদন প্রতিযোগিতায় সাভারও ভালো করার তালিকায় রয়েছে। এই প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি গোটা দেশও লাভবান হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাভার এরিয়ায় মোট এক হাজার ৭২৯ একর জমি রয়েছে। প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ প্রশাসনিক ভবনের জন্য লাগছে ৯৮১ একর। বাদ বাকী ৭৪৮ একর জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে।১৬০ একর জমিতে ৬৪টি পুকুরে চাষ হচ্ছে মাছ। বাকী ৫৮৮ একর জমিতে ফলদ ও বনজ গাছের কৃষিভিত্তিক উৎপাদন চলছে পুরোমাত্রায়।

একই সঙ্গে সাভারে মিলিটারি ফার্মে প্রয়োজনীয় জমি বাদে গবাদিপশু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ হচ্ছে।

সাভারে এরিয়ার আওতাধীন জাজিরার অন্তর্গত চর জানাজাতে ৪২৭টি গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। সাভার এরিয়ার বিভিন্ন ফার্মে পালনকৃত ২ হাজার ৫৫৮টি গরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার ২০০ লিটার দুধ পাওয়া যাচ্ছে।

সাভার এরিয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন শেষে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসম্মত অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করছি। শুধু সেনাবাহিনী নয় সাধারণ মানুষের কাছেও এই পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো। এই মডেল শুধু এখানেই থেমে থাকবে না অন্যরাও এটা অনুসরণ করবেন।’

পরে সেনাপ্রধান সেখানে একটি পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন ও বৃক্ষরোপণ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর কিউএমজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. মোশফেকুর রহমান, সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. খালেদ আল-মামুন, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/বিএস/এনএল

Print Friendly, PDF & Email