রেকর্ড গড়ে জিততে হবে বাংলাদেশকে
প্রকাশিতঃ 6:48 pm | November 05, 2018

খেলা ডেস্ক, কালের আলো:
চতুর্থ ইনিংস। টার্গেট তিনশ’র বেশি রান। উপমহাদেশের উইকেটে কোন টেস্ট ম্যাচে এমন টার্গেট প্রায় সময়ে বিপদজনক। তবে বিপদকে জয়ও করা যায়। সিলেট টেস্টে তেমনই এক বিপদজনক টার্গেটকে জয় করতে নেমেছে বাংলাদেশ। এই টেস্ট জিততে বাংলাদেশের সামনে সাকুল্যে টার্গেট ৩২১ রানের। কাল বিকালে ১০.১ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশ কোন ক্ষতি ছাড়াই তুলে নিয়েছে ২৬ রান। ম্যাচ জিততে হলে আর ২৯৫ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। হাতে অক্ষত ১০ উইকেটের সবগুলো। সময় বাকি পাক্কা দুদিন।
সময় প্রচুর। ওভারও প্রচুর। উইকেটও পর্যাপ্ত। সমস্যা হলো শেষ ইনিংসে এত বেশি রান তাড়া করে জেতার ইতিহাস যে নেই বাংলাদেশের। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মাটিতে কোন দলই কখনোই এত বেশি রান তাড়া করে টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি ৩১৭ রান তাড়া করে টেস্ট জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। সিলেট টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে আরও বড় টার্গেট দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। জিততে হলে বাংলাদেশকে নিজ মাটিতে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়তে হবে।
চ্যালেঞ্জের এই ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে স্পিনার তাইজুল ইসলামের বোলিং পারফরমেন্স। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও তাইজুল চমৎকার পারফরমেন্স দেখান। প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। ম্যাচে ১৭০ রানে ১১ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১০ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকারের কৃতিত্ব গড়লেন তাইজুল। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ‘টেন উইকেট শিকারের’ এই ক্লাবে তাইজুল চতুর্থ সদস্য। তার আগে এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। সাকিব এই কৃতিত্ব দেখান দু’বার। সিলেট টেস্টে তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের যথাযথ মর্যাদা দেয়ার একটা সুযোগ এখন দলের ব্যাটসম্যানদের সামনে। বাংলাদেশ ৩২১ রানের টার্গেট টপকে যেতে পারলেই তাইজুল বলতে পারবেন-‘ যে ম্যাচে বাংলাদেশ রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে জিতেছিল সেই ম্যাচেই আমি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছিলাম!’
তবে সিলেটের উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ৩২১ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা মোটেও এলাম, দেখলাম আর জয় করার মতো সহজ কোন ব্যাপার হবে না। স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছেন বেশ। বল নিচু হতে শুরু করেছে। উইকেটে ফাটল বাড়ছে। হঠাৎ গুডলেন্থ থেকে কিছু বল লাফিয়ে উঠছে। শার্প টার্ন এন্ড বাউন্সের দেখা মিলছে। কোন সন্দেহ নেই এই টেস্টের চতুর্থ দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে যা অপেক্ষা করছে তার নাম-চ্যালেঞ্জ!
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসও এই উইকেটে বেশিসময় টিকতে পারেনি। দিনের দুই সেশনেই ১০ উইকেট হারায় তারা। থেমে যায় ১৮১ রানে। অথচ সকালে শুরুটা মন্দ হয়নি তাদের। সকালের সেশনে ২ উইকেট হারালেও যোগ করে তারা ৯০ রান। একসময় জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১০১ রান। শেষে ৮ উইকেট হারায় তার মাত্র ৮০ রান যোগ করে। লাঞ্চের পর হ্যামিল্টন মাসাকাদজার হঠাৎ মনে হলো রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে আসা মেহেদি হাসান মিরাজ রিভার্স সুইপ খেলার। বলের লাইন মিস করে ৪৮ রানে এলবিডব্লু হন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। ব্যাটিং ধসের সেই শুরু। মাসাকাদজার মতো একই ভুল করেন শন উইলিয়ামস। সিকান্দার রাজা নিচু হয়ে আসা বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন ২৫ রানে। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও রিগেস চাকাভা ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ধৈর্য্যশীল ভঙ্গিতে খেলে ৩৫ রান যোগ করেন। কিন্তু চা বিরতি থেকে ফেরার পর মিরাজের প্রথম ওভারেই ওয়েলিংটন মাসাকাদজা এলবিডব্লু হওয়ার পর জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লেজ খসে পড়ে। মাত্র ১৬ রানে হারায় তারা শেষ ৪ উইকেট। তাইজুল শিকার করেন ৫ উইকেট। আর প্রথম ইনিংসে উইকেটশূণ্য থাকা মেহেদি মিরাজ পান ৪৮ রান খরচায় ৩ উইকেট।
টার্গেট ৩২১ রান। লিটন দাস ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটে নিরাপদে শুরুর ১০ ওভার পার করে বাংলাদেশ। দুজনের দুটি করে চার বাউন্ডারিতে স্কোরবোর্ডে রান জমা হয় ২৬। স্পিনার সিকান্দার রাজা তার ওভারের প্রথম বল করার পর আম্পায়াররা লাইটমিটার পরীক্ষা করে জানান-মাঠে আলোর স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। সেই সংকট আর কাটেনি। বাধ্য হয়ে আম্পায়াররা তৃতীয়দিনের খেলার সমাপ্তি টানেন। তখনো দিনের খেলা শেষ হতে নির্ধারিত ১৩.৫ ওভার বাকি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয়দিন শেষে) জিম্বাবুয়ে ১ম ইনি: ২৮২/১০ (১১৭.৩ ওভারে, মাসাকাদজা ৫২, চারি ১৩, টেলর ৬, শন উইলিয়ামস ৮৮, সিকান্দার রাজা ১৯, মুরস ৬৩*, চাকাভা ২৮, অতিরিক্ত ১, আবু জায়েদ ১/৬৮, তাইজুল ৬/১০৮, নাজমুল ইসলাম ২/৪৯, মাহমুদউল্লাহ, ১/৩)। বাংলাদেশ ১ম ইনিং: ১৪৩। জিম্বাবুয়ে ২য় ইনি: ১৮১/১০ (৬৫.৪ ওভারে, মাসাকাদজা ৪৮, টেলর ২৪, শন উইলিয়ামস ২০, সিকান্দার রাজা ২৫, চাকাভা ২০, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১৭, তাইজুল ৫/৬২, মিরাজ ৩/৪৮, নাজমুল ২/২৭)। বাংলাদেশ ২য় ইনি: ২৬/০ (১০.১ ওভারে, লিটন ১৪*, ইমরুল ১২*)
কালের আলো/ওএইচ