একটি ফেসবুক পোস্ট এবং ঠিকানাহীন সেই খোকনের জীবনে ফেরা

প্রকাশিতঃ 12:21 am | September 15, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

একেবারেই ঠিকানাহীন জীবন। কাটে সড়ক বা ফুটপাতেই। এই ফুটপাতই তাঁর ঘর। আদর, স্নেহ বা ভালোবাসা এসব শব্দ যেন নিজ ভুবন থেকেই নির্বাসিত। অযত্ন-অবহেলায় অর্ধেকজুড়ে পচে গেছে ডান পা। উৎকট গন্ধে কাছে যায় না কেউ। তাঁর জীর্ণ কাঁথার ভাঁজে চাপা পড়েছে জীবনের সব আহ্লাদ আর স্বপ্ন।

বিকীর্ণ আঁধারে হারিয়ে যাওয়া, পঞ্চাশের ঘর পেরুনো খোকনের যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের উপকথা বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) ফেসবুকে পেজে পাঠিয়েছিলেন জোবায়ের শামীম নামের একজন। বিষয়টি নজরে আসে সংগঠনটির সভানেত্রী ও আইজিপি পত্নী জীশান মীর্জার। আকুতি স্পর্শ করলো তাঁর হৃদয়কে।

অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী খোকনের খোঁজ নিতে অনুরোধ করলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শেরে বাংলা নগর থানাকে। অত:পর গত রোববার (২২ আগস্ট) রাতে তাঁর দেখা মিললো শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনের ফুটপাতের সড়কে। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে।

প্রায় ২২ দিনের চিকিৎসায় সেই খোকন এখন অনেকটাই সুস্থ। দু’বার অপারেশন হয়েছে। শত চেষ্টা সত্ত্বেও রক্ষা করা যায়নি পচন ধরা ডান পায়ের। কেটে ফেলতে হয়েছে পচে যাওয়া অংশটি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম ছিল। এজন্য প্রায় দশ ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে।

চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় আর পুনাক সভানেত্রীর মানবিক ঔদার্যে জীবনের ছন্দে ফিরেছেন খোকন। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। পুনর্বাসন করা হয়েছে গাজীপুরে গিভ অ্যান্ড সি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

হাসপাতাল ছাড়ার আগে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় জানিয়েছেন স্বয়ং পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। সঙ্গে উপহার হিসেবে দিয়েছেন নিত্যকার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কাপড়, শুকনো খাবার, হুইল চেয়ার আর ক্রাচ।

শুধু কী তাই? অসহায় খোকনের মুখে ভাষা জুগিয়েছেন। ভরসা দিয়েছেন বুকে আর চোখে এঁকে দিয়েছেন স্বপ্নকাজল। দেখিয়ে দিয়েছেন আত্মবিকাশের পথ। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁর নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখারও।

বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়নের স্বাপ্নিক-রূপকার ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এর মতোই তাঁর জীবনসঙ্গীর চিত্তেও বারবার প্রবল আলোড়ন তুলে অনির্বাণ মানবিকতার। পুনাক সভানেত্রীর দায়িত্ব নিয়েই জীশান মীর্জা অমোঘ পূর্বাভাস দিয়েছিলেন মানবিক উত্থানের।

করোনাকালেও অভুক্ত, অর্ধভুক্ত দু:স্থ, অসহায় এবং বিপন্ন মানুষের চোখের ভাষা ও মনের ভাষা অনুধাবণ করেই তাদের পাশে দাঁড় করিয়েছিলেন পুনাককে। নিয়মিতই দিয়েছেন খাবার সহায়তা। সংগঠনকে ব্যস্ত রেখেছিলেন মনুষ্যত্ববোধের বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞে।

ঈর্ষার অনল আর সামাজিক অবক্ষয়ের জামানায় ঠিক যেন ব্যতিক্রমী এক চরিত্র ড.বেনজীর-জীশান মীর্জা দম্পতি। নিজেদের আপন চিন্তাধরায় সরল মনের গভীর অনুভূতিময় আবেগ-উচ্ছ্বাসই যেন জানান দিয়ে চলেছে মানবিক অভ্যুদয়ের চিরায়ত বাণী। এভাবেই তাঁরা পূর্ণ করতে চান নিজেদের হৃদয়পুরের মানবিক বৃত্তটিকে।

আলোকময় পরম অস্তিত্ব আর উপলব্ধির প্রাণ-উৎস হিসেবে পুনাক এগিয়ে চলেছে মানবিকতার পক্ষে অতুলনীয় এক শক্তি হিসেবেই। অসহায়ের জীবনে আলো ছড়িয়ে জুগিয়ে যাচ্ছে শাশ্বত প্রেরণাও।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email