ইতালিতে নাগরিকত্ব অর্জন ও বিদেশি কর্মী নিয়োগ সহজের উদ্যোগ ব্যর্থ

প্রকাশিতঃ 3:14 pm | June 11, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

ইতালিতে নাগরিকত্ব অর্জনের শর্ত সহজ করা এবং বিদেশি কর্মী নিয়োগে উদারনীতি গ্রহণে সরকারকে বাধ্য করতে গণভোটের আয়োজন করা হলেও ভোটকেন্দ্রে আসেননি আশানুরূপ ভোটার।

আর এতেই ইতালিতে নাগরিকত্ব অর্জন ও বিদেশি কর্মী নিয়োগ সহজের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। মূলত গণভোট ব্যর্থ হওয়া মানেই ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির জয়।

ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি। দেশটির বামপন্থি ও মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং শীর্ষস্থানীয় একটি শ্রমিক ইউনিয়ন সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই গণভোটের আয়োজন করেছে। রোববার শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত চলে এই ভোট।

গণনা শেষে দেখা গেছে, পাঁচ কোটি ১০ লাখ ভোটারের দেশটিতে গণভোটে অংশ নিয়েছেন মাত্র ৩০ ভাগ ভোটার।

ইতালির আইন অনুযায়ী, গণভোটকে সফল করতে হলে দেশটির মোট ভোটারের অন্তত ৫০ শতাংশের ভোট প্রয়োজন হয়। আগে থেকেই শঙ্কা ছিল প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনতে ব্যর্থ হতে পারেন আয়োজকেরা। বিভিন্ন জনমত জরিপেও মিলেছে তার ইঙ্গিত। ভোট শেষেও সেই শঙ্কাটি সত্য হলো।

এই ফলাফলকে প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির জন্য একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। রোববার ভোটার উপস্থিতি যখন ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, তখন রোমের একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন মেলোনি। সেখানেই তিনি আবারো ঘোষণা দেন, এই গণভোটে তিনি ভোট দেবেন না। এর আগেও নিজের সমর্থকদের গণভোট থেকে বিরত থাকার আহ্বান রাখেন তিনি।

কেন এই গণভোট?

ইতালির জন্মহার তীব্রভাবে কমেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশটির অর্থনীতির গতিও কমেছে। এই ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে হলে আরও বেশিসংখ্যক বিদেশি নাগরিকদের দেশটির প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশি কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা বিশ্বাস করেন, ইতালিতে তাদের নানা সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে জর্জা মেলোনি সরকারের গৃহিত নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই এই গণভোটের আয়োজন করা হয়। এতে মোট পাঁচটি ইস্যুতে ইতালির জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হয়। চারটি ছিল কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা সম্পর্কিত প্রশ্ন। এগুলো হলো: চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে কর্মীদের সুরক্ষা, বেতন-ভাতা বাড়ানো, বেকারত্ব ভাতার বিধান যুক্ত করা এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

গণভোটের পঞ্চম অংশে ছিল ইতালির নাগরিকত্ব অর্জনে দেশটিতে বসবাসের মেয়াদ ১০ বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব। আয়োজকেরা বলছেন, নাগরিকত্ব অর্জনে বসবাসের মেয়াদ সরকার ১০ বছরে উন্নীত করার কারণে অন্তত ২৫ লাখ বিদেশি নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জনমত জরিপ সংস্থা ইউট্রেন্ড জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণের কৃষিপ্রধান অঞ্চলের চেয়ে উত্তরের শিল্পাঞ্চলে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল। আর দেশটির যেসব শহরে বাম দলের প্রভাব রয়েছে, সেখানেও ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

মন্ত্রিপরিষদের আন্ডারসেক্রেটারি এবং মেলোনির মিত্র জোভানবাতিস্তা ফাৎসোলারি বলেন, “প্রতিক্রিয়া খুবই স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হলো সরকার বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে এবং বিরোধী দল দুর্বল হয়েছে, জনসমর্থন হারিয়েছে।”

গণভোট ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে জরিপ সংস্থা ইউট্রেন্ড-এর লরেঞ্জো প্রেগলিয়াস্কো বলেন, ভোটার উপস্থিতি “৩০ শতাংশের ওপরে হোক বা তার ঠিক নীচে, তারপরও এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম… আয়োজকদের প্রত্যাশা এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক কম।” ইনফোমাইগ্রেন্টস

কালের আলো/এসএকে