গাজীপুরে প্রতারণার অভিযোগে ভুয়া সাংবাদিক গ্রেপ্তার

প্রকাশিতঃ 7:45 pm | March 01, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারী প্রতারক মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুলকে(৩২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১।

র‍্যাব জানিয়েছে, আটককৃত সাংবাদিক পরিচয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তিন বছর আগে একটি মেয়েকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সাজানো কাজী দিয়ে বিয়ে করেন। পরে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন। পরে এসব অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকের বিভিন্ন ফেইক আইডি দিয়ে ছড়িয়ে দিনে। এছাড়াও তিনি ভুক্তভোগী ওই নারীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব-১ বিষয়টি নিয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। সোমবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গাজীপুরের গাছা এলাকায় একটি অভিযান চালায়। অভিযানে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়দানকারী প্রতারক মো. তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুইটি ভুয়া সাংবাদিকের আইডি কার্ড, দুইটি ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, ১১ টি ভুয়া প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ড, তিন প্রকার ভিজিটিং কার্ড, একটি স্পাই ক্যামেরা, সাতটি এটিএম কার্ড, ছয়টি চেক বই, একটি পে-অর্ডার, একটি বিবাহের হলফনামা, একটি ভুয়া জীবন বৃত্তান্ত ফরম, একটি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত বেল্ট, চারটি পেনড্রাইভ, দুইটি মেমোরি কার্ড, ছয়টি মোবাইল ফোন এবং ৪১টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, তাজবিরুল ইসলাম সবুজের জন্মস্থান বাগেরহাট জেলায়। তিনি বিগত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে বসবাস করছেন। তিনি বর্তমানে গাজীপুরের সালনা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। পড়াশোনায় তিনি অষ্টম শ্রেণির গন্ডি পার হতে না পারলেও নিজেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেয়। চাকরির পাশাপাশি তিনি আব্দুল্লাহপুরে ‘দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল’ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের সংবাদকর্মী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তিনি সাংবাদিকতার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আবদুল মোমেন বলেন, তার প্রতারণার কাজে ফজল, তোফাজ্জল, মাসুম, আলতাফসহ আরো দুই থেকে তিনজন তাকে সহযোগিতা করতেন। গ্রেপ্তার শেখ শিমুল নামে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে এবং তার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঁচটি একাউন্ট রয়েছে। এছাড়াও ভিন্ন নামে তিনি দুইটি টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করেন বলেও জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত তাজবিরুল ইসলাম সবুজ ওরফে শেখ শিমুলের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আবদুল মোমেন বলেন, সবুজ বিগত ২০০৫ সালে তার নিজ এলাকায় প্রথম বিয়ে করে। পরবর্তীতে তার প্রথম স্ত্রী এক বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পবরর্তীতে ২০১২ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার দ্বিতীয় স্ত্রীও এক বছর সংসার করে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পরে সবুজ বাগেরহাট থেকে গাজীপুরে এসে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। গামের্ন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরির সুবাদে ২০১৪ সালে একজন গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করেন।

পরবর্তীতে তিনি ২০১৮ সালে উত্তরখান মাজার তালতলা এলাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করার সময়ে তার তৃতীয় স্ত্রী বর্তমান থাকাবস্থায় নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সেখানে কর্মরত একজন গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন। পরে তিনি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক সর্ম্পক করেন। এছাড়াও শারীরিক সর্ম্পকের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখে। ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিয়ের কথা বললে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত সবুজ স্থানীয় একজন মৌলভী সাহেবকে বাসায় ডেকে এনে মৌখিকভাবে ওই নারীকে বিয়ে করেন। ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিয়ের কাবিননামা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তিনি ওই নারীকে বিভিন্নভাবে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বিষয়টি ওই নারী তার পরিবারকে জানায় এবং তাদের পরামর্শে সবুজের সঙ্গে তিন বছর ধরে ঘর সংসার করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, গ্রেপ্তার সবুজ এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছে।

ওই নারী সবুজকে বিয়ের আগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওই নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক সম্পর্কের ধারণকৃত গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন।

কালের আলো/এসবি/এমএম