দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ‘নতুন কৌশল’

প্রকাশিতঃ 1:24 pm | June 09, 2021

সৈকত বিন মোস্তফা, জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা, কালের আলো:

কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান করতে বিশেষ কৌশল নিতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে জীবিকা উজ্জীবিত করার বাজেট। যেখানে প্রবৃদ্ধির চেয়ে জীবন রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ওপর বেশ জোর দেওয়া অর্থমন্ত্রী।

করোনাকালে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফামের জরিপে উঠে এসেছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কর্ম হারিয়েছেন।

আর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য বলছে, করোনায় নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন।

এ অবস্থায় কর্মসংস্থান বাড়াতে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবনায় ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করার দিশা দিয়েছেন। বিপর্যস্ত শিল্পখাত বাঁচাতে একগুচ্ছ প্রণোদনা আর কর সুবিধার প্রস্তাব করেছেন। শিল্পখাতে এই প্রণোদনা নতুন উদ্যোক্তারা যদি বিনিয়োগ নিয়ে আসেন, তবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, এসব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।

অন্যদিকে নতুন কর্মহীন ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

সরকারের মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রশিক্ষিত ও বেকার যুবকদের কৃষিক্ষেত্রে, কৃষিসংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও সেবা, গ্রামীণ অঞ্চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় এবং আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।

জানা যায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসংশ্লিষ্ট ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য পাঁচটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে— কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, আনসার ভিডিপি ব্যাংক এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং পল্লী অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশন ও এনজিও ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এসব ঋণ কর্মহীনদের মধ্যে কর্ম সৃষ্টির জন্য বিতরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য দুটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ ৬৮ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বেকার তরুণ, বিদেশফেরত কর্মহীন এবং নিম্নআয়ের মানুষকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হবে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রবাসে কর্মসংস্থান বাড়াতে নতুন উৎসও খোঁজা হবে। এছাড়া প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে।

গত ৩ জুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কর্মবাজারে প্রবেশ করেন। চলতি বছরের মধ্যে আরও ১০ লাখ মানুষের আইটি খাতে কর্মসংস্থান হবে। সরকারি বড় বিনিয়োগ এবং শিল্প ও বাণিজ্যে বড় প্রণোদনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।

সরকারের নীতি বিবৃতি অনুযায়ী, বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ খোঁজা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ দশমিক ২ কোটিরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন।

কালের আলো/এসবিএম/আরজেবি

Print Friendly, PDF & Email