প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতায় উন্নতি-উৎকর্ষতায় এনএসআই, আরও পেশাদারিত্বের অঙ্গীকার ডিজির

প্রকাশিতঃ 8:01 pm | April 07, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে তিনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে দক্ষ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে (এনএসআই) আধুনিক এবং শক্তিশালী করার জন্য প্রতিনিয়ত পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি ও রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার দৌলতেই একটি পেশাদার ও আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থায় রূপ লাভ করেছে এনএসআই।

প্রধানমন্ত্রীর এমন মহানুভবতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তেই উচ্চারণ করেছেন এনএসআই’র মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের। গত রোববার (০৪ এপ্রিল) জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) নবনির্মিত বহুতলবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিজের স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-চেতনা, মনন, মাধুর্য আর দেশপ্রেমের সৃষ্টিশীল কর্মের উজ্জ্বল প্রভা উপস্থাপন করেন মহাপরিচালক।

পরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভার্চুয়ালি এই ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড.আহমদ কায়কাউস।

জাতির পিতার হাত ধরেই জন্ম নেওয়া এই গোয়েন্দা সংস্থাটিকে উন্নত বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তাল মিলিয়ে একটি পেশাদার ও আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থায় পরিণত করার প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারের কথা জানান মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের।

নিজেদের এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আনুকুল্য ও দোয়া চেয়েছেন। একেই সঙ্গে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে এনএসআই এর প্রতিটি সদস্য অবিচল আস্থা ও প্রত্যয় নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এমনটিও জানিয়েছেন ডিজি।

নিজের বক্তব্যের শুরুতেই এনএসআই মহাপরিচালক গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, ৩০ লক্ষ বীর শহীদ ও নির্যাতিত ২ লক্ষ মা বোনদের। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তিনি স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে ঘাতকদের হাতে শাহাদত বরণকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যকে।

এনএসআই প্রতিষ্ঠা ও বঞ্চনার আদ্যোপান্ত
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তার দূরদর্শী চিন্তা ভাবনা থেকে ১৯৭২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর এনএসআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় এনএসআই অবহেলিত থাকার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনেকটা সংগঠিত হয়।’

সত্যের উজ্জ্বল প্রভা নিয়েই দৃঢ়চিত্তে এমন উপস্থাপন ডিজি মেজর জেনারেল টিএম জোবায়েরের। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০০১ এর পরবর্তীতে সংস্থাটি পুনরায় উপেক্ষিত হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের পর হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে এনএসআই প্রকৃত আলোর মুখ দেখে এবং ক্রমাগত উন্নতি এবং উৎকর্ষতা লাভ করে।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিয়ত পৃষ্ঠপোষকতা
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি উন্নতি ও সমৃদ্ধির রোল মডেল হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেছে’ উপলব্ধির গভীরতায় যেন নিজেকে সমর্পণ করে বলছিলেন মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এনএসআইকে আধুনিক আর শক্তিশালী করার জন্য আপনি প্রতিনিয়ত পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছেন। নবনির্মিত এই ভবনটি নি:সন্দেহে এর প্রমাণ বহন করে।’

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ২০ তলা ভবন
৬ বছর আগে রচিত হয়েছিল নতুন এক ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) কার্যালয়ের নব-নির্মিত আধুনিক বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে গত রোববার (০৪ এপ্রিল) জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) নবনির্মিত বহুতলবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ফলে স্বভাবতই এই দিনটি এনএসআই’র প্রতিটি সদস্যের জন্য অনেক আনন্দের, একই সঙ্গে বিশেষ প্রাপ্তির দিনও। সেই কথাই নিজের কন্ঠে ধারণ করে এনএসআই ডিজি বলেন, ‘এনএসআই এর কাজের ব্যপ্তি এবং সংবেদনশীলতার সাথে সামঞ্জস্য কোন আধুনিক ভবন ছিলো না।

আপনি আমাদের চাহিদা অনুধাবণ করে ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ সালে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নতুন এই ভবনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আধুনিক সুবিধাটি এই বিল্ডিংটিকে একটি আইকনিক বিল্ডিংয়ে পরিণত করেছে। মুজিববর্ষে ২০ তলা এই ভবনটি বিশেষ উপহার হিসেবে পেয়ে আমরা আপনার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবো।’

এনএসআই’র অগ্রযাত্রার সারসংক্ষেপ
‘এনএসআই বর্তমানে একটি পেশাদার এবং আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থায় পরিণত হবার লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে’ এমনটি উল্লেখ করে সংস্থাটির ডিজি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত আমাদের সাংগঠিক কাঠামোগত প্রায় ৩ হাজার এর অধিক জনবল সৃজিত হয়েছে। আপনি এনএসআই এর জন্য রেশন সুবিধা, প্রয়োজনীয় যানবাহন এবং ঝুঁকি ভাতা মঞ্জুর করেছেন।

ঢাকাস্থ ধামরাইয়ে একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে। বর্তমানে ২৩টি জেলায় আমাদের নিজস্ব ভবন রয়েছে এবং বাকি জেলায় নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসকল পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আপনার আনুকূল্য ও দূরদর্শীতার কারণে। আমরা আপনার এই মহানুভবতার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।’

আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এনএসআই
আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে প্রতিনিয়ত এনএসআই কাজ করে যাচ্ছে, এমন মন্তব্য করে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতি, মাদক, অস্ত্র, চোরাচালান, মানব ও মুদ্রা পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ চক্রকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারে সক্ষম হচ্ছে। এনএসআই সদস্যগণ দেশের সকল বিমান, স্থল, সমুদ্রবন্দরে নিয়োজিত রয়েছে।

আমাদের নজরদারির কারণে বিমান বন্দর ও স্থলবন্দর থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হচ্ছে। দেশের ভিভিআইপি এবং রাষ্টীয় অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আমাদের দক্ষ ও পেশাদার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। জঙ্গি দমনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ বাস্তবায়নে আমাদের কাউন্টার টেরিরিজম উইং নিরলসভাবে কাজ করছে।

এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমাদের সুদৃঢ় ও কার্যকরী সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণে আমরা এ পর্যন্ত সাফল্যজনকভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এনএসআই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।’

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে কার্যকরী ভূমিকায় এনএসআই
ডিজি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি মাদার অফ হিউমিনিটি হিসেবে মায়ানমারে নির্যাতিত ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আপনি এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

ভাসানচরে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৫৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠাতে আমরা কার্যকরী ভূমিকা রেখেছি। ভবিষ্যতেও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

নিজের পূর্বসূরীদের প্রতি ডিজির কৃতজ্ঞতা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বদৌলতেই এনএসআই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেই মনে করেন সংস্থাটির ডিজি মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের। তিনি এ অর্জনের জন্য নিজের পূর্বসূরী সকল মহাপরিচালক, সাবেক পরিচালক এবং অনন্য সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে