বাংলা মুভির বাঁকবদলে ‘অপারেশন সুন্দরবন’; ৩৩ কোটি বাঙালির মন জয়ের টার্গেট
প্রকাশিতঃ 10:49 pm | February 24, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
অপহরণ, হত্যা আর দস্যুতাই সেখানে ছিল নিয়ম। মাওয়ালি, বাওয়ালি থেকে শুরু করে বনজীবী বা বন্যপ্রাণী সবাই ছিল অনিরাপদ। কার্যত সেখানে ভেঙে পড়েছিল আইন-শৃঙ্খলা। জলদস্যুদের নিত্য উল্লাসে তৈরি হয়েছিল ভীতিকর এক পরিস্থিতির। কিন্তু জলদস্যুমুক্ত সুন্দরবন উপহার দিতেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল এলিট ফোর্স র্যাব।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে জ্ঞানের ফেরিওয়ালাদের যেভাবে ‘কুপোকাত’ করেছিলেন আইজিপি ড.বেনজীর
ঠিকই সুন্দরবনে সাফল্যগাঁথা গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট। কিন্তু বিস্মৃতির অতলে একদিন হারিয়ে যেতে পারে র্যাবের বীরত্বপূর্ণ এ অভিযানের গল্প। অনাগত প্রজন্ম সম্ভবত ধরেই নিবে জন্ম থেকেই শান্ত-নিরাপদ স্বভাব ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ ম্যানগ্রোভ বনের। কিন্তু আদতে এমন বাস্তবতা একেবারেই নিরর্থকই বটে!
বিস্মৃতির অস্পৃশ্যতাকে পাশ কাটিয়ে র্যাবের সাফল্যগাঁথার রোমাঞ্চকর উপাখ্যান নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নামের একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ‘র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’-এর প্রযোজনায় মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে মুক্তি দেওয়া হয় বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত এই ছবিটির টিজার।
টিজারে জলদস্যুদের ভয়ঙ্কর কর্মকান্ড দমনে র্যাব সদস্যদের রোমাঞ্চকর অভিযানের কয়েক ঝলক বাড়িয়ে দিয়েছে সিনেমাটি দেখার তৃষ্ণা। এই পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে র্যাবের ঐতিহাসিক ভূমিকা যেমন প্রস্ফুটিত হবে তেমনি বাংলা সিনেমার বাঁকবদলও ঘটবে বলেই মনে করছেন অনেকেই।
আর্মি গলফ ক্লাবের কনভেশন সেন্টারে ওইদিন মুভিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সুন্দরবনে র্যাবের দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনের গল্পও আলোকপাত করেন। এ ছবিটি বিশ্বের ৩৩ কোটি বাঙালির মন জয় করবে-এমন আশাবাদী উচ্চারণ উঠে আসে পুলিশ প্রধানের মুখে।
৪০০ বছর আগেও জলদস্যুদের উৎপাত ছিল সুন্দরবনে
সুন্দরবন নিয়ে ইতিহাসকে নিজের জবানীতে তুলে আনেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনে ৪০০ বছর আগে মোগল আমলেও জলদস্যুদের উৎপাত ছিল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রায় ৪০ বছর সুন্দরবন এবং এই দক্ষিণাঞ্চলে মানুষকে জলদস্যু উৎপাত সহ্য করতে হয়েছে। এটি একটি ভয়াবহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার চ্যালেঞ্জ ছিল।
প্রতিবার মৎস্য ধরার মৌসুম আসতো এমন কোন বছর ছিল না যখন পত্র-পত্রিকায় এই জলদস্যুদের অত্যাচার নিপীড়নের খবর প্রকাশিত হয়নি। একাধিকবার মহান পার্লামেন্টেও দক্ষিণাঞ্চলের সংসদ সদস্যবৃন্দ এই সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আমরা জানি যে যারা ভিকটিম ছিল তারা ছিল মূলত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই অঞ্চলকে জলদস্যুমুক্ত করার জন্য র্যাব ফোর্সেস চেষ্টা করে। র্যাব ফোর্সেস ২০১২ সাল থেকে অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় এখানে অপারেশন শুরু করে। এ সময় বিপুল সংখ্যক জলদস্যুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জলদস্যু র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়। এখানের দিনের পর দিন অপারেশন করা, থাকা সেটি কত চ্যালেঞ্জিং সেটি না থাকলে না গেলে বুঝা যায় না।’

প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন
অপারেশন সুন্দরবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথমেই পুলিশপ্রধান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এ অভিযানে নিহত র্যাব সদস্য কাঞ্চন আলীকে। তিনি বলেন, ‘এ অপারশনের সময় আমাদের একাধিক কর্মকর্তা সদস্য আহত হয়েছেন, এখানে মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে, তারা বিভিন্ন ধরণের অসুখে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের এক সদস্যের হাত ভেঙে গিয়েছিল অপারেশনের সময়। এই ধরণের বহু সেক্রিফাইস এখানে রয়েছে। এই অঞ্চলটি এমন এখানে টানা কয়েকদিন থাকলে কাজ করলে বাইরে থাকলে শরীরের ওপর লবণ জমে যায়। পানির মহাসঙ্কট, বিদ্যুৎ নাই, রাতে মশা, বাঘের ভয়-সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি সুন্দরবনে।
সেখানে দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টা র্যাব ফোর্সেসের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ মাতৃকার জন্য দিনের পর দিন অপারেশন করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে সুন্দরবন সম্পূর্ণভাবে দস্যুমুক্ত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে এই এলাকার মৎসজীবী, শ্রমজীবীরা যারা গোলপাতা ও মধুসংগ্রহ করেন তারা নিরুদ্বেগভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের পেশা-জীবিকা নির্বাহ করছে। যেটা ২ থেকে ৩ বছর আগে অসম্ভব ছিল।’
২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন উল্লেখ করে ড.বেনজীর আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করেন। করে বলেন যে, তোমাদের সুন্দরবনে জলদস্যুমুক্ত করার এক বছর পূর্তি আর কয়েকদিন পরে তোমরা এটি উদযাপন করবে। ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত করার প্রথম বর্ষ উদযাপন করেছি। গত বছর এটি উদযাপিত হয়নি। প্যান্ডেমিক বা অতিমারি হতে পারে বা অন্য কোন কারণে। কিন্তু আমি র্যাব ফোর্সেসকে বলবো প্রতি বছরই মহাসাড়ম্বরে এ দিনটি উদযাপন করা উচিত।’
বিস্মৃতিপ্রবণ বাঙালির জন্যই এই চলচ্চিত্র
‘এ ফিল্মটি তৈরির অন্যতম কারণ জাতি হিসেবে আমরা খুবই বিস্মৃতি প্রবণ’ এমনটি উল্লেখ করে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এখানে যে ত্যাগ রয়েছে, তীতিক্ষা রয়েছে, দেশমাতৃকার প্রতি অমিত ভালোবাসা রয়েছে। যে ভালোবাসার কারণে র্যাব ফোর্সেসের সদস্যবৃন্দ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে অপারেশন করেছে। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছে। একদিন সময়ের পরিক্রমায় মানুষ এটিকে ভুলে যাবে। সেজন্য আমরা একটি ডকুমেন্ট্রি করতে চেয়েছিলাম। উদ্দেশ্য যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে এখানে কী ছিল এবং সেখানে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব কী অর্জন করেছে এটি ডকুমেন্ট্রি হওয়া দরকার ইতিহাসের প্রয়োজনে।
সেই কারণেই আমি মূলত সিদ্ধান্ত নেই, দিস এচিভমেন্ট, গ্লোরি অব দি ফোর্স, অনেক মানুষের অফিসার সদস্যদের আত্মত্যাগ, পরিশ্রম-এটি শুধুমাত্র আমরা বলতে চাই, আমাদের ল এন্ড ফোর্সরা যে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে দেশ মাতৃকার জন্য, জনগণের জন্য কাজ করেন এটি কিন্তু মাস শেষে একটি বেতনের চেকের জন্য করেন না। কেউ ভাবতে পারেন, মাস শেষে বেতনের চেক পান এজন্যই বোধ হয় এগুলো করেন। এর সঙ্গে বেতনের যে চেক আমরা প্রতি মাস শেষে পাই এজন্য দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু তার ওপরেও সর্বোপরি দেশের প্রতি ভালোবাসা, গণমানুষের প্রতি ভালোবাসা, নাগরিকদের প্রতি প্রতিজ্ঞা রয়েছে, প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি প্রতিপালনের অন্তর্নিহিত তাগিদ রয়েছে প্রত্যেকের ভেতর। সেই তাগিদ থেকেই মূলত এ আত্মত্যাগের মনোভাব সৃষ্টি হয়। সমস্ত চ্যালেঞ্জ ভেঙে কিছু অর্জনের প্রয়াস প্রত্যেকের মনে দেখতে পাই। মূলত সেই কারণে আমরা এটি করতে চেয়েছি। অনেক অফিসার, সদস্যের শ্রম, রক্ত রয়েছে এ অপারেশনের পেছনে।
আমি ওই সময় যারা আমার নির্দেশে তাদের প্রত্যেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তোমরা সেই সময়ে যে ঝুঁকি নিয়েছো আজকে সমগ্র জাতি তার ফলভোগ করছে। সুন্দরবনে এক সময় বাঘের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল। এখন বাঘ, হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আমরা সুন্দরবনে চারটি স্থায়ী ক্যাম্প করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বন বিভাগ ও বন মন্ত্রণালয়কে বুঝাতে ব্যর্থ হয়, এর গুরুত্ব। সে কারণে এটি আজ পর্যন্ত করা যায়নি।’

প্রথাগত সিনেমার কোন মূল্য নেই
প্রথাগত সিনেমার কোন মূল্য নেই-মন্তব্য করে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এখন সিনেমার ধরণ প্রকৃতি সবকিছু পাল্টেছে। সাধারণ উদ্যোগ উদ্যমের এক ধরণের প্রয়াস। কিন্তু যারা জেনেশুনে পড়াশুনা করে, টেকনোলজি সম্পর্কে জেনে, মডার্ন মিডিয়া সম্পর্কে জেনে ফিল্ম বানায় তাদের এক ধরণের প্রয়াস। আমাদের বাংলাদেশের যেসব প্রডিউসাররা বানায়, এ ধরণের ল এনফোর্সমেন্ট ফিল্ম বানানোর নূন্যতম অভিজ্ঞতা নাই বলছি অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে।
আমি অনুরোধ করবো যখন ভাই আপনারা ফিল্ম বানান, যখন হলিউড-বলিউড ফিল্ম বানায় তারা কিন্তু রিটায়ার্ড মিলিটারি পারসন বা রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসারকে কনসালটেন্ট নিয়োগ করে। এরপর ফিল্ম বানায়। কিন্তু আমাদের এখানে সব সময় দেখি ল এনফোর্সারদেরকে একটি কার্টুন ক্যারেকটার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথবা শেষ দৃশ্যে হঠাৎ করে পুলিশ দৌড়ে এসে উপস্থিত হয় এই ধরণের দৃশ্যে পুলিশের ক্যারেক্টার সীমাবদ্ধ।’
অল্প বাজেটেই ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্র
সিনেমাটির নির্মাণ প্রসঙ্গে আইজিপি আরও বলেন, ‘এটি তৈরি করতে আমাদের বেশি বাজেট লাগেনি। তবে এতে যে লজিস্টিক সাপোর্ট, উপকরণ, অস্ত্র, সুবিধা ব্যবহৃত হয়েছে এগুলো যদি টাকায় ভাড়া করতে হতো তাহলে এটা করতে ৩০-৪০ কোটি লাগত। সেটা লাগেনি কারণ আমাদের ফোর্স সার্বিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। আমরা খুব অল্প বাজেটে কাজ শেষ করেছি।’
কোথায় কোথায় অপারেশন সুন্দরবনের শুটিং?
অনুষ্ঠানে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার পরিচালক দীপংকর দীপন জানান, দেশপ্রেম, রোমাঞ্চ, রহস্য, সাহস, দীর্ঘদিনের অপরাধের শিকড় উন্মোচন, অপরিসীম প্রতিকূল ও রহস্যে ঘেরা বনভূমি সুন্দরবন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন’ প্রযোজনা করেছে র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। সিনেমাটি নিয়ে এরই মধ্যে দর্শকের আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার শুটিং শুরুর আগে এক বছরের বেশি সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছে পরিচালক দীপংকর দীপন ও তাঁর দল। সিনেমার শুটিং হয়েছে মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, লবণচরা, সুন্দরবনের দুবলার চর, কটকা, কালিকা চর ও মোংলায়। এ ছাড়া পোড়াবাড়ী, গাজীপুর, র্যাব ট্রেনিং স্কুল, র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে শুটিং হয়েছে।’

কী ছিল দেড় মিনিটের টিজারে
‘অপারেশন সুন্দরবন’র টিজার মোহিত করেছে সবাইকে। বেশ কয়েকবার অনেকের অনুরোধে পর্দায় দেখানো হয় চমকিত টিজার। ভয়ঙ্কর নৃশংসতা দিয়ে শুরু হয় টিজার। এখানে শান্ত কোমল সুন্দরবনের এক ভয়ঙ্কর রূপ প্রদর্শিত হয়েছে। জলদস্যুরা সুন্দরবনকে কীভাবে ব্যবহার করতো, জেলেদের উপর দস্যুদের অত্যাচারের গল্পের কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে।
রহস্যে ঘেরা সুন্দরবনকে টিজারে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে, ‘এই শান্তভাবটা সুন্দরবনের লোক দেখানো। এই বন আসলেই খুব বিপজ্জনক।’ কিংবা ‘সুন্দরবন খুবই রহস্যজনক, এখানে সবই সম্ভব।’
সুন্দরবনের জলদস্যু দমনে আত্যোৎসর্গকৃত র্যাব সদস্য পি.সি. কাঞ্চন আলী সহ অন্যান্য অভিযানে র্যাবের ২৮ জন অকুতোভয় বীর শহীদের স্মরণে উৎসর্গকৃত টিজারটিতে ভিন্ন লুকে দেখা যায় চিত্রনায়ক রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ, তাহসিন ও চিত্রনায়ক রোশানকে। বাঘ গবেষক হিসেবে এক নজর দেখা যায় হার্টথ্রুব নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকেও।
মুভিটির বাস্তবায়ন ও স্বপ্নের কথা র্যাবের এডিজির কন্ঠে
‘অপারেশন সুন্দরবন’ মুভিটির বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার। কীভাবে শুটিং করলে ভালো হয় কিংবা কারো কোন বিপদ হয়নি তো, কার কী লাগবে-ইত্যাকার বিষয়াদি তিনি সামলেছেন এক হাতেই। মুভিটির বাস্তবায়ন ও স্বপ্নের কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাধারণত স্পেশাল ফোর্সেস, আর্মড ফোর্সেস নিয়ে ছবি তৈরি হয়। সেই সিনেমা দেখে সারা পৃথিবীর তরুণ-তরুণী বয়োবৃদ্ধ সবাই রোমাঞ্চিত হয়। এখানে দু’টি প্রেক্ষাপট থাকে।
যারা মুভিটি দেখে তারা মূলত সাসপেক্টস চায়, ড্রামা, অ্যাকশন ও এন্টারটেইনমেন্ট চায়। কিন্তু এই এন্টারটেইনমেন্টের ভেতরে মধুর মতো একটি পারসেপশন মিশিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যারা তৈরি করে তাদের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের মনে একটি পারসেপশন তৈরি করা যে বাহিনীসমূহ কীভাবে কাজ করে। আপনারা জানেন বাহিনীসমূহের কাজ খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় না, দূর থেকে দেখে। একটা কথা আছে পারসেপশন ইজ স্ট্রংগার দেন ফ্যাক্ট সাম টাইম।’

তিনি বলেন, আপনারা জেমস বন্ড দেখেছেন। সেখানে গোয়েন্দাবৃত্তিকে হিরোইজম হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই যে পারসেপশনকে মুভির মাধ্যমে মানুষের ভেতর প্রোথিত করা। এই পারসেপশন ধারণ করেছিলেন তৎকালীন র্যাব ডিজি ও বর্তমান আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ স্যার। র্যাব ফোর্সেসের জন্য একটি মুভি তৈরি করা শুধুমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট বা র্যাব ওয়েলফেয়ার ফান্ডের জন্য কিছু টাকা কালেকশন নয়। এই যে সুন্দরবনের ভেতরে র্যাব ফোর্সেস কাজ করেছে, ত্যাগ-তিতীক্ষা রয়েছে এটা মানুষের দেখার সুযোগ ছিল না কিংবা নেই।
মানুষ দেখেছে সারেন্ডার করেছে। এই সারেন্ডারের পেছনে বন্দুকযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সারেন্ডারের কাহিনীটি ইতিহাসের কালো গহীন গহ্বরে হারিয়ে যায়। সেই কাহিনীগুলোকে যখন আমরা এই সেলুলয়েডে ধরে রাখবো ভবিষ্যতে এটিই আমাদের আর্কাইভ হিসেবে কাজ করবে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা বাহিনীতে এসে এভাবে ত্যাগ-তীতিক্ষার জন্য উৎসাহিত করবে। সুতরাং এটি শুধু এন্টারটেইনমেন্ট নয়, শুধুমাত্র সাসপেন্স ড্রামা বা অর্থ উপার্জন নয়।’
অনুষ্ঠানে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এসবি প্রধান মীর শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুব হোসেন, ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের মুখপাত্র লেঃ কর্নেল আশিক বিল্লাহসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এনএল/বিএসকে