মুজিববর্ষের উপহার তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার

প্রকাশিতঃ 10:29 am | February 17, 2021

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী :

সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন; মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে তারই সুযোগ্য তনয়া বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সরকার সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে হিজড়া সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিক নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নিপীড়িত-নির্যাতিত-নিষ্পেষিত এই সম্প্রদায় কখনো পুরুষ বা কখনো নারী পরিচয়ে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে জীবন ধারণের কঠিন পন্থা অবলম্বন করে আসছিল। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর এই জনগোষ্ঠী অস্পৃশ্য বর্ণ বৈষম্যের শিকারে পরিণত হয়ে জীবন-জীবিকার অনুসন্ধানে অবাঞ্ছিত-অসামাজিক এবং বৃহত্তর সমাজ কর্তৃক অগ্রহণযোগ্য দিনানিপাতে অভ্যস্ত। অতি সম্ভ্রান্ত-উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সামান্য শারীরিক অসংলগ্নতার কারণে প্রত্যেকেই পরিবারের আপনজন কর্তৃক নিদারুণ অবজ্ঞা ও অবহেলার করুণ শিকার।

পরিবারের একজন হিসেবে পিতামাতা-ভাইবোন-নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশীসহ সবার বিরূপ আচরণে তাদের মননে এমন এক মনস্তাত্ত্বিক তাড়না তৈরি করা হয়, তারা নিজেদের স্বাভাবিক সমাজে বসবাসের সাবলীল ভাবনায় নিতান্তই অপারগ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনিন্দ্য প্রকাশিত ‘দলিত ও জাতি-বর্ণ বৈষম্য : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ (২য় প্রকাশ) মৌলিক গবেষণা পাঠ্যগ্রন্থে নিবন্ধের লেখক একাডেমিক পরিক্রমায় দেশে দলিত প্রত্যয়টি সর্বপ্রথম ব্যবহার করে হিজড়া সম্প্রদায়কেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেন। ২০০৬ সাল থেকে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান প্রফেসর এসকে তউরাতের সমন্বিত উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ায় পাঁচটি দেশে পাঁচজন গবেষককে মনোনীত এবং উল্লিখিত বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ ও তা সম্পাদন করার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এরই আলোকে নিবিড় গবেষণালব্ধ গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশকাল ছিল ২০০৮ সালের জুলাই। গ্রন্থটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়—সমকালীন বাংলাদেশ সমাজে অধস্তনতা ও শ্রমভিত্তিক বৈষম্যের প্রকৃতি ও পরিধির মাত্রা নির্ণয় করা।

গবেষণায় গভীর পর্যবেক্ষণে আবিষ্কৃত হয়েছে, হিন্দু শাস্ত্রীয় এবং সামাজিক-ধর্মীয় ঐতিহ্য হতে উদ্ভূত হলেও সংশ্লিষ্ট সামাজিক বর্জনতা মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটে একই রূঢ়তায় নির্মমভাবে অভিশপ্ত। নিবন্ধের স্বল্প পরিসরে বিস্তারিত বর্ণনা দুরূহ উপলব্ধিতে শুধু তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য বা হিজড়াদের কেস স্টাডির সামান্য কিছু বর্ণিত হলো।

এটি সর্বজনবিদিত যে, প্রথাগতভাবে ভারতবর্ষের হিন্দুরা বিভিন্ন ধরনের উঁচু, নিচু ও তফসিলি জাতিবর্ণে বিভক্ত যারা অভ্যন্তরীণভাবে সমরূপ ও পারস্পরিকভাবে বিন্যস্ত। তাদের বিশেষ করে হরিজন সম্প্রদায়ের চরম দুঃখ-দুর্দশা, অসহিষ্ণু পর্যায়ে কলঙ্কিত, আচরণগত দিক থেকে অপবিত্র ও অস্পৃশ্য সামাজিক মর্যাদার নিকৃষ্টতম অবস্থান থেকে গতিশীলতার উঁচু মানদণ্ডে অভিষিক্ত করার উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধী তাদের ‘হরিজন’ (ভগবান বিষ্ণুর সন্তান) অভিধায় অভিহিত করেন। এ ধরনের অস্পৃশ্য জনগোষ্ঠীর মতোই তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য বা হিজড়ারাও অস্পৃশ্যতার মোড়কে যুগপৎ বন্দি। কোনো গৃহ-পানাহার-রেস্টুরেন্ট বা সাধারণ মানুষের যাতায়াতযোগ্য স্থানে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। নগর-শহর-গ্রাম, যে কোনো অঞ্চলে তাদের প্রতি পাথর ছুড়ে মারা, কটূক্তিমূলক অভিব্যক্তি, টিটকারী, শারীরিকভাবে আক্রমণ ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ঘটতো। এসব কারণে তারা দলবদ্ধভাবে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করার উপায় প্রকাশে কদুত্তর বাক্যবিনিময়ে বিষোদগারের কুরীতি অনুসরণ করে আসছে। পরিবারের প্রথম দেয়া নাম পরিবর্তন করে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া তৃতীয় লিঙ্গের এসব সদস্য শৈশবেই পরিবার কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়।

অনেক ক্ষেত্রে পরিবার থেকে জোরপূর্বক হিজড়া পল্লীতে অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। সরকারি বা বেসরকারি মানবিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা তাদের অন্যান্য অস্পৃশ্যদের চেয়েও অধিকতর ধিকৃত মনে করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পরিবর্তিত হলেও তারা এখনো ভিক্ষাবৃত্তি ও যৌন পেশাকেই গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। প্রাচীনকাল থেকে এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী কোনো দালানের শেষ ধাপ বা ছাদ নির্মাণকালে শ্রমিকদের কাজে উৎসাহিত করা, নবজাতক শিশুদের আশীর্বাদ, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের পূর্বে নাচ-গান করে ভিক্ষাবৃত্তির মতোই চাঁদা আদায়ে হৃদয়ে প্রোথিত মনস্তাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন-রাস্তা-দোকান-বিপনীকেন্দ্র বা হাট-বাজারের সম্মুখে দলভিত্তিক অশোভন আচরণে বিব্রত বা ব্যতিব্যস্ত করে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও জীবনযাপনে এরা এতবেশি অসহায় যে সামগ্রিকভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, খাদ্য-পুষ্টি সঙ্কট ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম দারিদ্র্যের অতিশয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। পরিবার থেকে নির্বাসিত বলে সম্পত্তি থেকেও তারা বঞ্চিত।

২০২০ সালের ৫ নভেম্বর গণমাধ্যম প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে দেশে প্রথম দাওয়াতুল কোরআন নামক তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ অনুসারে দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার হলেও বেসরকারি সংস্থার মতে, এর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি। ২০১৭ সালে পুলিশ স্টাফ কলেজের গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, হিজড়ারা সাধারণত অযাচিতভাবে শরীরে হাত দেয়া, জোরপূর্বক টাকা আদায়, অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন, শরীরের ওপর পড়ে যাওয়া, নতুন জন্ম নেয়া শিশুর জন্য টাকা আদায়, বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে টাকা আদায়, দোকান-রেস্টুরেন্ট থেকে টাকা আদায়, গাড়ির জানালা দিয়ে টাকা গ্রহণ, এটিএম বুথের বাইরে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়, ধমক দিয়ে টাকা আদায়, উলঙ্গ হয়ে কিংবা শরীরের কোনো অংশের কাপড় তুলে দেখানো ইত্যাদি কর্মের মাধ্যমে জনসাধারণের নিকট থেকে টাকা আদায় করে থাকে। টাকা আদায়ের সময় হিজড়া সম্প্রদায় যেমন সামাজিকভাবে অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে, তেমনি তারাও বিভিন্নভাবে দৈহিক লাঞ্ছনায় উৎপীড়িত হয়।

হিজড়া জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীর পারিবারিক, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষাব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহীত কর্মসূচি চলমান রয়েছে। দেশের সাতটি জেলা তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, বগুড়া এবং সিলেটে এই কর্মসূচির আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে চার কোটি সাত লাখ ৩১ হাজার ৬০০ টাকা, চার কোটি ৫৮ লাখ ৭২ হাজার এবং পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চতর স্তরে যথাক্রমে জনপ্রতি মাসিক ৭০০, ৮০০, ১০০০ এবং ১২০০ টাকা উপবৃত্তি প্রদান, ৫০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের অক্ষম ও অস্বচ্ছল হিজড়াদের বিশেষ ভাতা জনপ্রতি মাসিক ৬০০ টাকা প্রদান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান। এর আওতায় ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৩৫, ৭৬২, ৭৮৯ জন এবং ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ উভয় অর্থবছরে ১২৪৭ জন উপকারভোগীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। উল্লিখিত অর্থবছরে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৫০, ৯৫০, ৯০০, ১৯০০ ও ১৯২০ জন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তথ্যমতে, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলার চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে ভূমি-গৃহহীন অসহায় মানুষকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে ১৯৯৭ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন পরিদর্শন করে ভূমি-গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভূমি-গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’—মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার যথার্থ বাস্তবায়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০ প্রণয়ন করা হয়। গত বছরের জুনে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়। তার অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমির মালিকানা সমেত নতুন ঘর উপহার দেন। একই দিনে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৭৪৩টি ব্যারাকে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে হিজড়ারা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এতকালব্যাপী পরিপূর্ণ অধিকার আদায়ে তারা সফল হতে পারেনি। ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওয়েব সূত্রে জানা যায়, জন্মগত ভিন্নতার কারণে পরিবার-সমাজচ্যুত হিজড়াদের অত্যন্ত মানবেতর জীবনের উন্নয়নকল্পে মুজিববর্ষে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত প্রকল্পের কারণে দেশে প্রথম তারা প্রকৃত অধিকার পায়। ভূমি-গৃহহীন, অসহায়-অস্বচ্ছলদের পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তারই উপকারভোগী হিসেবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় হাটিকুমরুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ০.৬৬ একর জমিতে চারটি পাঁচ ইউনিটের সেমিপাকা ব্যারাকে তৃতীয় লিঙ্গের ৫০ জন মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়। তাদের পাকা ঘরের পাশাপাশি জীবিকার জন্য সেলাই মেশিন চালানো, গরু পালন এবং সবজি চাষের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

এই উপকারভোগীদের একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজীবন ভেবেছি অন্য দশটা মানুষের মতো আমার জীবনটা এক নয় কেন? পথে পথে ঘুরে মানুষের থেকে ভিক্ষা করে সারাটা জীবন কেটেছে। নিজের কোনো ঠিকানা ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রী মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি মন থেকেই কৃতজ্ঞতা জানাই’।

পাশাপাশি দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার বাঙ্গি বেচা ব্রিজ সংলগ্ন পল্লীতেও এর আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের ১২৫ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের এই বিজয় সত্যিকার অর্থে পবিত্র সংবিধানের ধারা ২৮(১)সহ অন্যান্য ধারায় সন্নিবেশিত মানবতা-মানবিকতা-মনুষ্যত্বকে মর্যাদাসীন করে মহান মুজিববর্ষ উদযাপন ও দেশের সমাজ ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উম্মোচনের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবেই সমুজ্জ্বল থাকবে—এই প্রত্যাশাটুকু ব্যক্ত করে নিবন্ধের ইতি টানছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়