জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিতঃ 4:38 am | May 25, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামী শুক্রবার ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করবে।

জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় একযোগে শুক্রবার কবির স্মৃতিধন্য ত্রিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মূলত তিনি বিদ্রোহী। কবির প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম।

বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।

কাজী নজরুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক ও শোষনমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ার মানসে সাহিত্যে বিভিন্ন শাখায় লেখালেখি করেন। এ সব ক্ষেত্রে তিনি সংগ্রামী ও পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির বসবাসের জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন তিনি। সেই বাড়িটিই এখন নজরুল ইনিস্টিটিউট।

নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন।”

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি পালন শুরু হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

ত্রিশালে জাতীয় অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি থাকবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি। আলোচনায় অংশ নেবেন বেগম আখতার কামাল। স্বাগত ভাষণ দেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মো. মসিউর রহমান। এ ছাড়াও ঢাকা, ত্রিশাল , কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে সরকারী প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পালন করা হবে।

বাংলা একাডেমি দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা ও কবির সামধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, নজরুল একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করবে। বিটিভিসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো নানা অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো কবির ওপর বিশেষ সংবাদ ও নিবন্ধ পরিবেশন করবে।

কালের আলো/এমকে

Print Friendly, PDF & Email