হিন্দু রোহিঙ্গাদের কেন প্রথমে ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার?
প্রকাশিতঃ 9:59 pm | December 30, 2017
বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চেয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু শুরুতে তারা মাত্র ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু মিয়ানমারের এমন সিদ্ধান্ত কেন?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২২ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বাস্তব অবস্থা তৈরি হয়নি। পুরো বিষয়টিতেই অস্পষ্টতা আছে। আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে মিয়ানমার এক ধরনের চালবাজির আশ্রয় নিচ্ছে। মুসলিম রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা মিয়ানমারের নেই বলেই তারা প্রথমে হিন্দু রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে।
প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে ৪৫০ জন হিন্দু শরণার্থীকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেয়া হবে, বুধবার এ কথা জানান মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আইয়ি। নেপিদোতে মিয়ানমারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইটস অব মিয়ানমার এ খবর দিয়ে বলেছে, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে আজ-কালের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার সরকারকে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, “আমরা মনে করি, রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত যাবে।”
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত যা কাজ হয়েছে তাতে ২২ জানুয়ারি থেকে প্রকৃত অর্থে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বাস্তব অবস্থা তৈরি হয়নি। তাদের নিয়ে কেথায় রাখা হবে, তাদের নিরপত্তা ও অধিকার কী হবে– তা কিছুই নিশ্চিত নয়। তাই ২২ জানুয়ারি ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমার একটা চালবাজি করছে। তারা চাইছে আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে। এখন তো সু চির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উঠছে। আসলে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কোনো ইচ্ছা মিয়ানমারের আছে বলে আমার মনে হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “এই ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গাদের নিয়েও কোথায় রাখা হবে, তা আমরা জানি না। আমার ধারণা, হিন্দুপাড়া সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন যে, নিরাপত্তার কারণে রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ ফেরত যেতে চায় না।”
২৩ নভেম্বরের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের ও এ বছরের ২৫ আগস্টের পর যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন, তাদের ফেরত নেবে। মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার পর রোহিঙ্গাদের প্রথমে সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে। স্মারক সই করা হয়েছে ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চুক্তির আলোকে। এবারের সমঝোতা স্মারক মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত মানলে বাংলাদেশ থেকে তারা সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা ফেরত নেবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে সাড়ে ১১ লাখ। ২০১৬ সালের আগে আসা চার লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার কোনো কথা চুক্তিতে নেই৷
রাখাইনে নির্যাতনের মুখে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ৬ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা সই হয় গত ২৩ নভেম্বর। সেখানে দু’মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলা হয়।
এদিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে একটি যৌথ ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের কথা বলা হলেও, তা গঠন করতে লেগে যায় তিন সপ্তাহ। তারা এখন কাজ করছেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি হওয়ার কথা, তা এখনো হয়নি। এমনকি ওয়াকিং গ্রুপ মিয়ানমার বা বাংলাদেশের কোনো অংশই পরিদর্শন করেনি।