জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা নিয়ে ফের বাকযুদ্ধে আ’লীগ-বিএনপি

প্রকাশিতঃ 4:35 am | March 06, 2018

কালের আলো রিপোর্ট:

অতীতের নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতারা একে অপরের সঙ্গে বাকযুদ্ধে মেতেছেন।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পর পর ছুরিসহ ফয়জুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পেরেছে এই যুবক জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।

এই ঘটনায় ফয়জুরকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তার আরও একজন সহযোগী ছিল বলে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া গেছে। আর এই হামলার পরিকল্পনাকারী কে বা কারা ছিল, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি।

দেশজুড়ে তোলপাড় করা এই হামলায় জড়িতদেরকে খুঁজে বের করতে যখন জোর দাবি উঠেছে, তখনই দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে।

শনিবার হামলার পর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা আরেকটা চক্রান্ত। যারা দেশে এই ধরনের ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় এটা তাদেরই চক্রান্ত।’

পরদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যে শক্তি এই ধরনের হামলা করে, তাদেরকে মদদ দেয় বিএনপি।

এরও পরদিন সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই ঘটনায় সরাসরি সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সাজার দিক থেকে জনগণের নজর অন্যদিকে সরাতে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।…বিএনপি মনে করে জাফর ইকবালের উপর হামলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিপ্রসূত কাজ।’

একই দিন ওবায়দুল কাদের আবার বলেন, ‘হামলাকারীদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে। এরা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কিলিং গ্রুপের সদস্য। আর এই অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিএনপি নামক একটি দল।’

অতীতেও নানা ঘটনায় দেখা গেছে, আগাপিছু না ভেবেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একে অপরের বিরুদ্ধে কথার লড়াই শুরু করে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আবার সমালোচনা করে আসছেন। তাদের মতে, এতে প্রকৃত অপরাধীরা নিজেদের রক্ষায় সুযোগ পেয়ে যায়। আবার সমাজেও দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের অবনিত হয়। কারণ, দেশে দুই দলেরই ব্যাপক সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। নেতাদের বক্তব্য অনুসরণ করে তারাও পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা চালিয়ে যেতে থাকে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত। রাজনীতিবিদদের কাছে কী তথ্য আছে তার ভিত্তিতে তারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন? এটা নিয়ে এখন তদন্ত করতে হবে, প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত তাদের বের করতে হবে। কিন্তু এটা নিয়ে রাজনীতিবিদরা কেন কাদা ছুড়াছুড়ি করবেন?’

‘যদি কথা বলতে হয় তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলতে পারেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও একজন বক্তব্য দিতে পারেন। কিন্তু এটা নিয়ে রাজনীতিবিদরা কেন বাহাস করবে?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা অত্যান্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত। রাজনীতিবিদদের এধরনের বক্তব্যে আমরা লজ্জিত ও হতাশ। এতে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।’

গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল হামলার শিকার হন। আটক ফয়জুর পেছন থেকে তারা মাথা ও পিছে ছুরি নিয়ে হামলা করে।

এই শিক্ষাবিদকে দ্রুত উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাফর ইকবালের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরদিন রাজধানীতে দেয়া এক বক্তব্যে এই ঘটনার জন্য উ্গ্রপন্থীদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারা তো ধর্মান্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে করে একটা মানুষকে খুন করলে বুঝি বেহেশতে চলে যাবে।’

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email