সেই নার্সকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়: পুলিশ

প্রকাশিতঃ 9:28 pm | May 12, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসযাত্রী সেই নার্সকে তিনজনে মিলে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রোববার(১২ মে) বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন একথা বলেন।

তিনি বলেন, নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে শনিবার (১১ মে) বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরু (৩৯) কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন এর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আরো বলেন, বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার এজাহার নামীয় দুই আসামি বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২) এবং অন্য আরেকজন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে ওই একজনের নাম-পরিচয় এখনই জানানো যাচ্ছে না।

এছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) জব্দসহ বিভিন্ন আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অন্য বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদের সভাপতিত্বে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন-পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপস্ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট) মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপানসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

এর আগে বুধবার (৮ মে) বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন রিমান্ড শুনানি শেষে পাঁচ আসামির প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন-গাজীরপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), একই উপজেলার বীরউজলী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২) একই উপজেলার লোহাদী গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) এবং বাজিতপুর উপজেলার নীলক্ষি গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ মে) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদ জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ওইদিন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড ওই তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।

সোমবার (৬ মে) রাতে শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়ার ঢাকা থেকে বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকায় ওই তরুণী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার (সহকারী) লালন মিয়াসহ মোট পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

নিহত তানিয়া উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে রোববার (১২ মে) বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও মাথার পেছনে আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কালের আলো/এনএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email