ভারি অস্ত্রের শব্দে টেকনাফে তীব্র কম্পন, বাড়িঘরে ফাটল

প্রকাশিতঃ 4:27 pm | November 29, 2024

কক্সবাজার প্রতিনিধি, কালের আলো:

মিয়ানমারে তীব্র লড়াইয়ের কারণে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আতঙ্ক, উদ্বিগ্নতা এবং উৎকণ্ঠায় কাটছে টেকনাফ সীমান্তের মানুষের জীবন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এর মধ্যে লড়াই-সংঘাত প্রায় এক বছর ধরে চলছে। এ সংঘাতের ফলে ভেসে আসা বিকট শব্দের কারণে সীমান্তের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত থাকেন। ভারি অস্ত্র ও মর্টারশেলের তীব্র আওয়াজে মহিলারা, বৃদ্ধ এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। তীব্র কম্পনের কারণে সীমান্তের অনেক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে এবং ভয়ের কারণে অনেক বাসিন্দা বাড়ি ছেড়েছেন।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে মিয়ানমারে চলমান এই সংঘাতে এমন শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ তারা আর আগে শোনেননি। শক্তিশালী বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘরবাড়ি ‘থর থর’ করে কেঁপে ওঠে এবং বেশ কিছু বাড়ির দেয়ালে ফাটল ধরে। কম্পনের কারণে প্রথমে লোকজন ভাবেন যে ভূমিকম্প হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বসবাসকারী মানুষজন।

টেকনাফের সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের বিস্ফোরণের শব্দটি অত্যন্ত ভয়াবহ ছিল। এমন শব্দ আগে কখনও শোনা যায়নি। তীব্র কম্পনে আমার এলাকার অনেক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। আতঙ্কিত হয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন।’

স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে পর পর পাঁচটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত এলাকার বাড়িঘর থরথর করে কেঁপে ওঠে। এতে অনেকেই বড় ভূমিকম্পের ভয়ে ঘর-বাইরে ছোটাছুটি শুরু করেন।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার লোকজন একে অপরকে এ আতঙ্কের কথা জানাচ্ছিলেন।

ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দা আজিজুল হক রানা লেখেন, ‘ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে পর পর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ, বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে এপার।’

টেকনাফের বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কিত টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার রাতে স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ শহর কেঁপে উঠল।’

বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে?’

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে সীমান্ত দিয়ে যেন অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

সীমান্তে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে যাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ