ঢামেকের ইওটি দেশের জরুরি রোগীদের আস্থার প্রতীক

প্রকাশিতঃ 7:29 pm | November 28, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষটি (ইওটি) প্রায় সময় আহত রোগীদের মিছিলে পরিণত হয়। রাজধানীসহ সারা দেশের জরুরি রোগীদের জন্য রুমটি আস্থার প্রতীক ও ভরসার স্থান। ওই রুমে প্রতি মাসে আনুমানিক ৪ হাজার ৫০০ জনকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন দায়িত্বরত ক্যাজুয়ালিটির চিকিৎসকরা।

এছাড়া হাসপাতালে অন্যান্য ওয়ার্ড তো আছেই সেখানে বিভাগ অনুযায়ী আলাদা চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে।

জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর রুমে দুই শিফটে ১০ জন করে ২০ জন চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে থাকেন।

এই চার নাম্বার রুমে মাথা মুখমণ্ডলে আঘাত ছাড়া শরীরের যে কোনো স্থানে আঘাতের চিকিৎসা করা হয়। যেমন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, মারামারি, বুলেট ইনজুরি, ছুরিকাঘাত,টেঁটাসহ নানা রকম অস্ত্রে আঘাতপ্রাপ্ত জরুরি রোগীদের সেখানে চিকিৎসা করা হয়। এরকম রোগী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সেই কক্ষে আনুমানিক ৪০ জন জরুরি রোগীর মাইনর অপারেশন করে থাকেন ক্যাজুয়ালিটির চিকিৎসকরা। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় আনুমানিক ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন মেজর অপারেশন করা হয় আনুমানিক ৪ থেকে ৫ জন রোগীর।

তবে অনেকেই দাবি করেন, রোগীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। প্রায় সময় ওই রুমে চিকিৎসার জন্য আসা জরুরি রোগীদের ভিড় লেগে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও সেবা পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রাচীন এই হাসপাতালে রয়েছে তীব্র শয্যা সংকট। নেই পর্যাপ্ত জনবল। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ, দুর্ঘটনায় আহত, জখম, আগুনে দগ্ধ, জটিল সব রোগে আক্রান্ত যেকোনো রোগী এই হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে চিকিৎসাসেবা পাবেনই-এমনটা মনে করেন। আর তাই সারা দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসেন এই হাসপাতালে।

তিনি আরও জানান, যে জনবল রয়েছে, তা দিয়েই দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দেন প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও অনেক রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ফেরত পাঠায় না। বেডে না হোক, ফ্লোরে, ওয়ার্ডের বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে, হাসপাতাল-২ এর সংযোগকারী ফুটওভার ব্রিজের জুড়ে ও বাথরুমের পাশে বারান্দায় হলেও ঠাঁই হয়।

তবে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালকের অক্লান্ত পরিশ্রম কারণে ধারণ ক্ষমতার চাইতেও তিনগুণ বেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, কারণ, জুলাই আন্দোলন, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তন সবকিছুই মোকাবিলা করে বর্তমান পরিচালক রোগীদের পাশে ছিলেন, এখনো আছেন। সে সময় হাসপাতালের পরিচালক যদি শক্ত না থাকতেন তাহলে তখনই চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়তো বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে জরুরি বিভাগ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় আনুমানিক ১ হাজার ৫০০ রোগীর অধিক টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে থেকে অধিকাংশই রোগীকে তাদের রোগ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য রোগীদের রোগ অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়। আবার এদের মধ্যে থেকে বেশিরভাগ রোগী ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

তিনি জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালিটির ৪ নম্বর রুমে দুই শিফটে দুইজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকসহ ২৪ ঘণ্টা ২০ জন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত থাকেন। একেক শিফটে ১০জন করে চিকিৎসক থাকেন। ক্যাজুয়ালিটিতে চব্বিশ ঘণ্টা রোগীদের মাইনর অস্ত্রোপচার পাশাপাশি মেজর অস্ত্রোপচার করা হয়।

এদিকে জানা যায়, ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ১০১ ও ১০২ নম্বর দুটি ওয়ার্ড আছে। সেখানে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। সিবি ১ সিবি ২ ক্যাজুয়ালিটি ব্লকের দুটি ইউনিটের চিকিৎসকরা সব সময় রোগীদের ভর্তি অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ রোগী জরুরি বিভাগের চার নম্বর কক্ষ হয়ে সেসব ওয়ার্ড ভর্তি হয়।

কালের আলো/এমএএইচইউ