সরকারকে যে তিনটি ‘আশু সাফল্য’ অর্জনের পরামর্শ দিলো আইসিজি

প্রকাশিতঃ 10:17 pm | November 15, 2024

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালেের আলো:

নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে জনসমর্থন ধরে রাখতে তিনটি আশু সাফল্য অর্জনের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। বৃহস্পতিবার সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সারাংশে এসব পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। এতে সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কার উদ্যোগের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশাল দায়িত্বের মুখোমুখি হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন দিন আগে একটি গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এ সরকার দ্রুততার সঙ্গে একটি সাহসী রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়নে কাজ করছে। অনেক বাংলাদেশি হাসিনার পতনকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। যা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের গভীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।

এতে বলা হয়েছে, যদিও এই অন্তর্বর্তী সরকার আপাতত জনসমর্থন উপভোগ করছে, তবে উচ্চ প্রত্যাশা তাদের জন্য একটি দ্বিমুখী তলোয়ার। যদি তারা সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে দ্রুত নির্বাচন ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যা খুব একটা ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে। জনসমর্থন বজায় রাখতে ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘তাৎক্ষণিক সাফল্য’ অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে।

আইসিজি লিখেছে, শেখ হাসিনার পতনের পরে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন দল সমস্যায় পড়েছে। কারণ তারা এমন একটি পুলিশ বাহিনীর ওপর নির্ভর করছে, যারা অতীতে বিক্ষোভ দমনে অভিযুক্ত ছিল।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। যদিও এই অন্তর্বর্তী প্রশাসন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এর সদস্যদের অনেকেরই প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা খুব কম।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক গোষ্ঠী ইতোমধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তাদের মধ্যে অনেকে আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে সুবিধা নিতে চায়। এমনকি ড. ইউনূসের মিত্রদের মধ্যেও সাংবিধানিক সংস্কার এবং হাসিনা সরকারের সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।

আইসিজি লিখেছে, জনসাধারণের উচ্চ প্রত্যাশা মেটানো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অভিজ্ঞতা বলে, অন্তর্বর্তী সরকার যত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবে, তত দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিগুলো জোরদার হবে এবং তাদের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে।

আইসিজি আরও লিখেছে, ড. ইউনূসের সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কারের মতো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলবে। তদুপরি, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচার নিয়ে জনসাধারণের প্রতিশোধমূলক আকাঙ্ক্ষাকে সামাল দেওয়া হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে। তবে অতীত রেকর্ড বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন, তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো প্রমাণিত হবে না। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

জনসমর্থন ধরে রাখার বিষয় পরামর্শ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সর্বোত্তম কৌশল হলো জনসমর্থন ধরে রাখতে কিছু আশু সাফল্য অর্জন করা। ছোটখাটো দুর্নীতি কমানো, বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর উদ্যোগগুলো এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জনসমর্থন বজায় রাখা বিএনপির মতো রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডায় সমর্থন জানাতে বাধ্য করতে পারে।

এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল এবং গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী এবং শেখ হাসিনার পতনের পেছনে থাকা ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, ন্যায়বিচার ও পুনর্মিলনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সংবিধানের আওতায় থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা ভবিষ্যতে সিদ্ধান্তগুলো বাতিল হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করবে।

নির্বাচনের বিষয়ে আইসিজির পরামর্শ হলো, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য পুনর্গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থার অধীনে ১৮ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। যদি ড. ইউনূসের সরকার এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ