সিগন্যালস কোর রিক্রুটদের মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ, গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সমুন্নত রাখার আহ্বান ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’র
প্রকাশিতঃ 10:40 pm | November 03, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বাদ্যের তালে তালে মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ। দৃঢ় কণ্ঠে জীবন উৎসর্গ করার শপথ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিগন্যালস কোরের সদস্য হওয়ার অনন্য এক গৌরব অর্জন। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলে দীর্ঘ ৯ মাসের কঠোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫৭৯ জন নবীন সৈনিক। রবিবার (০৩ নভেম্বর) যশোর সেনানিবাসের সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলে সিগন্যালস কোর এর রিক্রুট ব্যাচ-২০২৪ এর সেনাবাহিনী প্রধান কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ প্যারেড এর এ যেন অভূতপূর্ব এক দৃশ্য।
মনোজ্ঞ এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম সিগন্যালস কোরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সমুন্নত রেখে তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধাপে ধাপে আরও প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে নবীন সৈনিকরা তৈরি করবে বলেও তাঁর প্রত্যাশার কথা জানান। এর আগে সকালে তিনি প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে যশোর সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার এন্ড স্কুলের কমান্ড্যান্ট তাকে অভ্যর্থনা জানান।
- অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই
- নৈতিক মূল্যবোধ, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা- এসব গুণাবলী দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে গুরুত্বারোপ
- দেশ ও জাতির উন্নতি এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখার পরামর্শ
- নেতৃত্ব, ভাতৃত্ববোধ ও টিম স্পিরিট তৈরিতে ভূমিকা
জানা যায়, দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করে ৫৩২ জন পুরুষ রিক্রুট ও ৪৭ জন মহিলা রিক্রুটসহ সর্বমোট ৫৭৯ জন রিক্রুট এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ মাতৃকার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের শপথ গ্রহণ করেন। আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত থাকার কথা জানান দেন। নবীন সৈনিকদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম অর্জনে উচ্ছ্বসিত তাদের অভিভাবকরাও। তাদের সন্তানরা নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে এই স্বপ্নে বিভোর তাঁরাও।
শপথ গ্রহণ প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম দেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা- এসব গুণাবলী দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে গুরুত্বারোপ করেন। পরামর্শ দেন নিরলস প্রশিক্ষণ অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নতি এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখার। এ সময় তিনি বলেন, ‘সিগন্যালস কোর এর রিক্রুট ব্যাচ-২০২৪ এর শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্ববোধ করছি। আমি আরও আনন্দিত যে, দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করে আজ তোমরা শপথ গ্রহণ করলে। আজকের এই শুভ দিনে প্রাণপ্রিয় আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশমাতৃকার সেবা করার যে শপথ তোমরা গ্রহণ করলে দোয়া করি সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন তা পালনে তোমাদের সামর্থ্য দান করে। এখন থেকে সিগন্যালস কোরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সমুন্নত রেখে তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধাপে ধাপে তোমরা আরও প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেদেরকে তৈরি করবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
চারিত্রিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা তোমাদের যেমন শাণিত করেছে, উল্লেখ করে জিওসি আরও বলেন, ‘আমি জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, সাধারণ সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তোমাদের সামরিক রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ও চরিত্র গঠন সম্পর্কে অভ্যস্ত করা হয়েছে। মনে রাখবে চরিত্র একটি অমূল্য সম্পদ। বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণমূলক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তোমাদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্ব, ভাতৃত্ববোধ ও টিম স্পিরিট তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। নৈতিক মূল্যবোধ, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও নিরলস প্রশিক্ষণ অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নতি এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখবে বলে আমি আশা ব্যক্ত করি।’
নবীন সৈনিকদের এই কুচকাওয়াজ অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘তোমাদের কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য, একাগ্রতা, আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি তোমাদের ওপর মহান আল্লাহ’র অশেষ রহমতের জন্যই তা সম্ভবপর হয়েছে। আমি জানি তোমাদের প্রশিক্ষণের প্রতিটি পদক্ষেপেই সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক বাধা বিঘ্ন ও পরীক্ষা। অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। মনে রাখবে প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা তোমাদের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণ। কঠোর পরিশ্রম, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ় মনেবলের জন্যই তোমরা সফলভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছো, এজন্য আমি তোমাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।’
রিক্রুট ব্যাচ ২০২৪ এর ‘সেনাবাহিনী প্রধান কুচকাওয়াজ’ অনুষ্ঠানে যশোর ও খুলনা অঞ্চলের উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা, জেসিও, অন্যান্য পদবীর সৈনিকরা ও প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী রিক্রুটদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। এই বছর সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ রিক্রুট হিসেবে রিক্রুট নূর মোহাম্মদ বিবেচিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
কালের আলো/এমএএএমকে