অবকাঠামো খাতে জনমুখী উন্নয়ের প্রত্যয়
প্রকাশিতঃ 5:29 pm | November 02, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেশের অবকাঠামো খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। ভবিষ্যতে যে সকল প্রকল্প নেওয়া হবে তার সকল তথ্য জনগনকে জানানোর পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
সড়ক পরিবহন, রেল ও বিদ্যুৎ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত জানিয়ে বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতেই এ সরকার। যতটা সম্ভব দুর্নীতি কমিয়ে অবকাঠামো খাতে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে ‘সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের পার্থক্য হলো অন্য সরকারের নির্বাচন করতে হয়, টাকা লাগে বা মাস্তানি করা লাগে। কিন্তু আমাদের সরকার ক্ষমতায় যায়নি আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। ছাত্ররা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। সুতরাং কায়েমি শাসনে দায়বদ্ধ নই। আমরা দায়বদ্ধ হাজারো শহিদদের প্রতি। ত্রিশ হাজারের বেশি আহতদের প্রতি।
তিনি বলেন, সাবেক সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে এক একটা প্রকল্পে। এটা ব্যক্তিগত টাকা না, জনগনের টাকা। এটা মাথায় রাখা উচিত। এ সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা আকাশচুম্বী। সকলে ভাবেন আমাদের কাছে জাদুর কাঠি আছে। আসলে কিছু নেই আমাদের কাছে। ব্যাংকে টাকা নেই। রাজনীতিবিদরা উসখুস করছেন কবে ক্ষমতায় আসবেন। আমরাও চাই নিজেদের কাজে ফিরে যাই। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি, গ্যাস বিদ্যুতের দাম নিয়ে ক্ষুদ্ধ মানুষ।
আমরা এখানে একটা কাজ করেছি, দুর্নীতির কাঠামো ভেঙে দিয়েছি। বিইআরসির আগের কাজ ফিরিয়ে দিয়েছি। ঢাকা মেট্রোতে সাবেক সচিব হতে হবে বলে যে বিধান ছিলো, সে নিয়ম বাদ দিয়েছি। যার অভিজ্ঞতা আছে তিনিই এখানে কাজ করতে পারবেন। আবার পাওয়ার গ্রিডে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে আমরা কাঠামোগত পরিবর্তন করতে শুরু করেছি।
কর্নফুলি টানেলের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, কোন প্রকল্প দরকার, কোনটা দরকার নেই সেটা জানতে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। বছরে বিশাল অংকের এলএনজি আমদানি করা হয়। দেশে গ্যাসের সন্ধান না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে এটা বাড়তে থাকবে। ভোলাতে ১০টা কূপ খননের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে গ্যাস পেলে এলএনজি আমদানি কমবে।
পদ্মা রেলসেতুতে অনেক ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রকল্পগুলোতে দেখা গেছে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। আগে ঠিকাদার ঠিক করে পরে টেন্ডার করা ছিলো আগের নীতি। ই-টেন্ডার মানে স্বচ্ছতা হবে কিন্তু তাতো হয়নি।
রেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেলের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বেনা, ব্যয়ও বাড়বেনা। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আর না। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা পূরনই আমাদের লক্ষ্য। আমরা দুর্নীতি যতটা সম্ভব কমিয়ে সংস্কার করব। আর এসব কাজে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগীতা প্রয়োজন।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, উড়াল সড়ক মানেই ছোট গাড়িকে অনুপ্রাণিত করা। আর ছোট গাড়ি শহরে ঢুকলে যানজট বাড়ায়। সব ধরনের মানুষ এ শহরে থাকবেন সে চিন্তা করেই নগর পরিকল্পনা করা হয়নি। আগের সরকারের সময়ও আমরা এসব কথা বলতাম তারা শুনেই শেষ করে দিতেন। যারা উন্নয়ন করবেন তারাই ওপেন সিক্রেট সুযোগ পেতেন অনেক বেশি যে কারনে প্রকল্পে গরমিল দেখলে তারা কখনো তার প্রতিবাদ করতেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিউট অফ প্লানার্স এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আকতার মাহমুদ বলেন, একটা ইকোনোমিক ক্যাডার ছিলো সেটা বিলুপ্ত করে দিয়েছে। সেখানে কি করে ভাল কিছু পাবেন। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে যে কারনে ব্যয় বাড়ে। আর তা হয় কেবল ব্যক্তির ইচ্ছা। সুনির্দিষ্ট।দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেই বলেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি ভৌত পরিকল্পনা করা উচিত। যা হয়েছে তা কেবল অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী দিনে অবকাঠামো খাতে এমন কিছু সংস্কার দেখতে চাই, যেগুলো মানুষ দেখতে পায়। বিশাল ঋণের বোঝা রেখে গেছে এ সরকারের ওপর। যা অন্তবর্তী সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রধান আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মেহেদি এইচ ইমন জোর দিয়েছেন অবকাঠামোর পরিবেশগত দিকে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে বাংলাদেশে। আর সেটা করে গেছে শেখ হাসিনা সরকার। দেশের অবকাঠামো করতে গিয়ে ঋনে জর্জরিত হয়েছে। তিনি শুধু ব্যাংক ডাকাতিই না ছোট ছোট শিল্প কারখানাগুলো ধ্বংস করে গেছে। এখান থেকে এ সরকার নিশ্চয়ই টেনে তুলতে পারবেন। আর এটাই হবে চ্যালেঞ্জ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক উমামা ফাতিমা বলেন, উন্নয়নের নামে সকল সেক্টর একদম ধ্বংস করে গেছে। আজ ঢাকায় শুধু উড়াল সড়ক, কোনো রাস্তা নেই ও জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে। সরকার কখনো এ সমস্যা সমাধান করতে চাননি। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে প্রজেক্ট শেয়ার করে উন্নয়ন না করে সমস্যার গভীরে গিয়ে কাজ করতে তিনি অন্তর্বতী সরকারের প্রতি আহবান জানান। গত পনেরো বছরে যা হয়েছে কোনো পরিকল্পনা ছিলোনা। কোনো প্রকল্পের তথ্য প্রমান জনগনের কাছে ওপেন করেনি। জনগনের টাকায় নেওয়া প্রকল্প জনগন কেন জানবে না। এটা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাদাত আলী বলেন, বিগত দিনে সকল প্রকল্প যে অপরিকল্পিত সেটা বলা যাবেনা। তবে ভুলতো ছিলোই। যেমন যেখানে যেটার প্রয়োজন নেই সেখানে সেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে যে প্রকল্প নেওয়া হবে তা যেন বিগত দিনের মতো না হয়। জনগনকে আমরা প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করবো। জনবান্ধব পরিবহণ ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। আগে যে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করা হয়েছে তার লাগাম টেনে ধরতে হবে। নতুন সরকারের সঙ্গে এ খাতকে এগিয়ে নিতে চাই।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ