৮ম ল্যান্ড ফোর্সেস টকস; বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা খাতে অভাবনীয় অগ্রগতির উজ্জ্বলতর সম্ভাবনা
প্রকাশিতঃ 9:31 pm | October 31, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান, মহড়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। নিয়মিতই ল্যান্ড ফোর্সেস টকস (এলএফটি) করছে দেশ দু’টি। ঢাকায় এবারের অষ্টম আসরেও নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতা বৃদ্ধির নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারে দেশটির আগ্রহ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে অভাবনীয় অগ্রগতির উজ্জ্বলতর সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। চলমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় নিজেদের মধ্যে নতুন এক অধ্যায়ের সূত্রপাত হবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
- দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু
- দু’দেশের নিরাপত্তাবিষয়ক শক্তিশালী অংশীদারত্ব
- সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে হবে একাধিক যৌথ প্রশিক্ষণ ও মহড়া
- কৌশলগত সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত
জানা যায়, গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৮ম ল্যান্ড ফোর্সেস টকস (এলএফটি) শুরু হয়। উভয় দেশের সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ফলপ্রসূ আলোচনার মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বৈঠকটি শেষ হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের (ইউএসএআরপিএসি) স্ট্র্যাটেজি এন্ড প্ল্যানস বিষয়ক ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল স্কট এ. উইন্টার। সেনাবাহিনী এবং সামরিক কৌশলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এই ধরনের বৈঠক উভয় দেশের প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধনের পথ সুগম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু
সূত্র মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু করেছে দুই দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নিরাপত্তাবিষয়ক অংশীদারত্ব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি সুদৃঢ়। এই সম্পর্ক বহুমাত্রিক, বহুমুখী এবং সর্বদা বিকশিত। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতার প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত সহায়তার বিষয়টি সুস্পষ্ট। দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে একসঙ্গে কাজ করে আসছে। দেশ দুটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সামরিক সফর বিনিময় সামরিক সহযোগিতার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৮ম ল্যান্ড ফোর্সেস টকস (এলএফটি) এ যোগ দিতে গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় এসে পৌঁছে মার্কিন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল। ওইদিন পৃথক সময়ে তাঁরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্যান ফর দ্য ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল স্কট এ উইন্টার। অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন- সারা জেনেট অ্যালবার্টসন, মি. জোশুয়া হ্যামিল্টন গেইগার, ড্যারেন অ্যালেন থারম্যান, সরকার ও আইনবিষয়ক ওরেগন মিলিটারি ডিপার্টমেন্ট দ্য ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি ওয়ার কলেজের ডিরেক্টর রাসেল গিবসন, এন্টার জেরেড ও মি. মাইকেল সাত্তেম প্রমুখ।
সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক যৌথ প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজনে আলোচনা
দু’দিনব্যাপী এই বৈঠকের আলোচনা পর্বে উভয় পক্ষই সামরিক সহযোগিতা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কৌশলগত সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তাঁরা জানায়, আলোচনায় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রশিক্ষণ আদান-প্রদান, উন্নত প্রযুক্তি ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পারস্পারিক সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশেষ করে, সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক যৌথ প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন, উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং অধিকতর কার্যকর যৌথ সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রতিনিধিরা উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান কৌশলগত সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার জন্য তাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রস্তুতি গ্রহণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করে। আলোচনায় নানাবিধ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রস্তুতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কালের আলো/এমএএএমকে