শাহজালালে বদলে গেছে যাত্রীসেবার মান, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ বিমান বাহিনী প্রধানের

প্রকাশিতঃ 10:52 pm | October 30, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত ৯০২ জন আনসার সদস্য আকস্মিক কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বিমান বন্দরে নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। এতে বদলে যায় যাত্রীসেবার মান। লাগেজ কাটা বা বিড়ম্বনার ভয় হয়েছে অতীত।

শক্ত হাতে টেনে ধরা হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম। বন্ধ হয়েছে পদে পদে হয়রানিসহ নানাবিধ যন্ত্রণা। নিশ্চিত হয়েছে জবাবদিহিতা, মিলছে সুআচরণও। নির্ঝঞ্ঝাট হয়েছে যাত্রীদের আকাশপথের যাত্রাও। পরিবর্তনের এমন হাওয়ায় প্রশংসায় ভাসছে দেশপ্রেমী বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব যেন কোন রূপকথার গল্প নয়, একেবারেই বাস্তব! অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ নৈপুণ্য, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিক সেবা আর সমন্বয়ের সারি সারি এমন চিত্রপট অবলোকন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নিজেও। গুরুত্বারোপ করেছেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) তিনি বিমান বন্দরটিতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের পরিচালনা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। বিমান বাহিনী প্রধান একে একে বিমান বন্দরের চেকিং কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, স্ক্যানার, বোর্ডিং ব্রিজ, এরাইভাল, ডিপারচার, এয়ার ক্রাফট পার্কিংসহ বিভিন্ন স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অসামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিভিন্ন বিমান বন্দর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করে চলেছে। সব রকমের অনিয়ম ও হয়রানি দূর করে বিমান বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে বিমান বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করছে।’

এর আগে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। এ সময় সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, বৈশ্বিক যোগাযোগ, টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিমান পরিবহন সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রয়োজনে আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বছর ১ কোটি ১৭ লাখ যাত্রীকে সেবা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ থেকে ৯৫ লাখ যাত্রী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ২৩ থেকে ২৫ হাজার যাত্রী বছরে চলাচল করছেন। চলতি বছরের শেষে যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রতিনিয়ত এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা উন্নত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে যাচ্ছে। এই টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। এর ফলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকাংশেই আমরা রহিত করতে পেরেছি
দেশের যেকোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও বিমান বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় বিমান বাহিনী কাজ করে চলেছে বলে জানান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে বাহিনীটির সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন এখানে নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মুখে পড়েছিল সেই সময় আমরা বিমান বাহিনী থেকে আমাদের লোকজন নিয়োগ করেছি। আমরা সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করেছি। দুর্নীতি, অনিয়ম, চোরাচালান ও অনৈতিক কার্যকলাপ যেগুলো হচ্ছিল সেগুলো অনেকাংশেই আমরা রহিত করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য লাগেজ দ্রুত পাওয়ার সুবিধা, দুর্নীতি এবং চোরাচালান রোধে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের সুনাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ধরে রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

দেশে আসা ও বিদেশগামী প্রবাসী বাংলাদেশী যাত্রীদের বিশেষ সেবা দিতেও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। তাঁরা যেন কোনভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। তাদের সব রকমের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবেন।’

বেবিচক চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ, বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা
ঢেলে সাজানো হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বিমানবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য এখানে কাজ করছেন। তাঁরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাকে ঘিরে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ফলে যাত্রী সুরক্ষাসহ বন্দরের নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি নেই। স্বল্পসময়ে যাত্রীসেবা সহজীকরণের জন্য বেবিচক চেয়ারম্যান, অন্যান্য সদস্য এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ। তিনি বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বিমান যাত্রীদের আগমন ও প্রস্থানকালে বাড়তি নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণে বিমান বাহিনীর নিরাপত্তা দল সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানে আইকাও এর নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে যাতে সেবার মান আরও বৃদ্ধি করা যায়।’ এছাড়া বিমান বাহিনী হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যেভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, তা দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিমান বাহিনী প্রধানের পরিদর্শনের সময় বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বেবিচক এর সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা), সদস্য (প্রশাসন), সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড এন্ড রেগুলেশন্স), সদস্য (নিরাপত্তা), প্রধান প্রকৌশলী এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে