রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় সাবের-মান্নানের জামিন
প্রকাশিতঃ 12:24 am | October 11, 2024
রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:
হঠাৎ করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও এম এ মান্নান জামিন পেয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগার থেকে মুক্তিও পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধী মহল বলছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তোপ দাগতে শুরু করেছে বিএনপিও। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না কখনও। সাধারণ মানুষের কাছে তাদের একপ্রকার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সম্ভবত এটি আমলে নিয়েই আদালত তাদের জামিন দিয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিন নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। তিনি আইনমন্ত্রী থাকাবস্থায় একজন খুনি কীভাবে জামিন পায়। এই এলাকায় কী রকম জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। কতজন হাত-পা হারিয়েছে। জনির মতো তরুণ জীবন দিয়েছে। তাকে বাড়ি থেকে তুলে এই জায়গায় নিয়ে এসে ১৬টি গুলি করে হত্যা করেছে। সাবের হোসেন চৌধুরী এর জন্য দায়ী নয় কি? তার নির্দেশেই (সাবের হোসেন চৌধুরী) ওই এলাকায় ১১ জন গুম-খুনের শিকার হয়েছে। এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না।’
সাবেক দু’মন্ত্রীর মুক্তির প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। বুধবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মশাল মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে আওয়ামী লীগের যেসব দোসর ঘাপটি মেরে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কেন সাবের হোসেন চৌধুরী ও এমএ মান্নানকে আটক করা হলো? কেনই-বা ক্লিন ইমেজের দাবি করে মুক্তি দেয়া হলো? এর মাধ্যমে তো আওয়ামী লীগ সাহস পেয়ে যাবে। তারা মনে করবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওয়ামী লীগের প্রতি সফট কর্নার রয়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে নেমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে কিন্তু এ সরকারকে তার দায় নিতে হবে।’
এর আগে গত ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এমএ মান্নানকে তার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের এক সপ্তাহের মধ্যে গত বুধবার (০৯ অক্টোবর) জামিন দেওয়া হয়েছে সাবেক এই মন্ত্রীকে। আর গত রোববার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় সাবের হোসেন চৌধুরীকে। পুলিশের গুলিতে মকবুল নামে বিএনপির এক কর্মী নিহতের মামলায় তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেন আদালত। রিমান্ডের সময়সীমা পার হওয়ার আগেই সব মামলায় জামিন পেয়ে যান সাবের হোসেন চৌধুরী। মুক্তি পান আদালতের হাজতখানা থেকে।
সাবের হোসেন চৌধুরী ও এমএ মান্নানের জামিনের বিষয়টিলে ‘ইতিবাচক’ বলছেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জেড.আই.খান পান্না। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘অজামিনযোগ্য ধারায় কোনো আসামিকে জামিন দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার আদালতের। এসব ক্ষেত্রে জামিন প্রদানে সাধারণত অসুস্থতা, বয়স, নারীসহ অন্যান্য মানবিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকেন আদালত। সাবের সাহেব এবং মান্নান সাহেবকে জামিন প্রদানের মাধ্যমে আদালতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এই দুইজন নেতার পাবলিক ইমেজ ভালো। আদালত হয়তো এটিও আমলে নিয়ে তাঁদের জামিন দিতে পারেন।’
কালের আলো/আরআই/এমএএইচ