বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজ পূর্ণগতিতে শুরু

প্রকাশিতঃ 8:45 pm | October 08, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

পূর্ণগতিতে কাজ শুরু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। বিচারে ভোগান্তি ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে প্রাধান্য দিতে চায় কমিশন। পাশাপাশি বিচারিক আদালতে বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা ও মামলার খরচও কমাতে রূপরেখা দিবে তাঁরা। কমিশন মনে করে, নির্বাহী বিভাগসহ সরকারের সব বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেছেন, ‘বিচার বিভাগে আস্থার সংকট ফিরিয়ে আনতে সুপারিশ করা হবে।’

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে দেশের দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তী সরকার। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বিভিন্ন খাতের সংস্কার করার ওপর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৩ অক্টোবর গঠন করা হয়। কমিশনের প্রথম বৈঠক হয় ৬ অক্টোবর। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান।

জানা যায়, কমিশন মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের দ্বিতীয় বৈঠক করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে। তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের সদস্যরা। এসময় কমিশন প্রধান বলেন, পুরোপুরি স্বাধীন বিচার বিভাগ একটি ভ্রান্ত ধারণা। সরকার ছাড়া বিচার বিভাগ চলে না। বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

কি কি বিষয়ে সুপারিশ করা হবে, এই প্রশ্নের জবাবে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গাইডলাইন এখনও সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো, দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির বিষয়গুলোকে জোর দিচ্ছে কমিশন।

কমিশন প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগ চাইবো। কমপ্লিট সেপারেশন অব জুডিশিয়ারি বলে কিছু নেই। মামলায় বিচার হলে রায় কার্যকর করবে কে? সরকার। তাহলে দেশ চালাতে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এ্যাবসিলিউট সেপারেশন বলে কিছু নেই।’

বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, ‘বিচার বিভাগ না থাকলে দেশ চলতে পারবে না। তবে, বিচার বিভাগের কথা সবাইকে শুনতে হবে। আমরা চাইব যেন হস্তক্ষেপ না হয়। নির্বাহী বিভাগ যাতে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে বিষয়ে সুপারিশ, প্রস্তাবনা দেয়া হবে। রায় পছন্দ না হলে আপিলের সুযোগ আছে। কারণ রায়ে তো দুই পক্ষকে খুশি করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করবে। রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার ব্যাপারে আমাদের রিজার্ভেশন রয়েছে। আমরা সুপারিশ দেব। সেটি নিয়ে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে উপদেষ্টা পরিষদ।’

কমিশন প্রধান বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে সরকার থেকে এখনো কোন গাইডলাইন আমরা পাইনি। হয়তো এরই মধ্যে পেয়ে যাব। সরকার কমিশনকে ৯০ দিনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে এই সময়ের মধ্যেই আমরা সংস্কারের সুপারিশ দেয়ার চেষ্টা করবো।’

দেশে ৪৩ লাখ মামলার জট রয়েছে তা কিভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে এ প্রশ্নে কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান মামলা জট কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকবে। কি কারণে এ বিশাল মামলা জট তাও নিরূপণ করা হবে।’

কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে