সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধের ইতিবাচক উদ্যোগে সাড়া
প্রকাশিতঃ 10:38 pm | October 01, 2024
মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:
দেশের সুপারশপগুলোতে অবশেষে বন্ধ হয়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপ বা এর সামনে ক্রেতাদের কেনার জন্য পাট ও কাপড়ের ব্যাগ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যেই এসব ব্যাগের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। রাজধানীর আগোরা সুপারশপের স্টোর ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম বলছিলেন ঠিক সেই কথাই- ‘পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এটি আরও অনেক আগে করা দরকার ছিল।’
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এদিন বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় দুটি সুপারশপ পরিদর্শন করেন। প্রথমে তিনি ছুটে যান সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত আগোরা সুপারশপে। সেখানে যেতেই দেখা মিলেছে সুতা দিয়ে তৈরি ব্যাগ গ্রাহকদের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাগের মূল্য রাখা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ সময় উপদেষ্টা শপ ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলেন। পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি এই উদ্যোগ সম্পর্কে ক্রেতাদের মনোভাব জানতে চান। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান ক্রেতারা।
এর আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান। নতুন এই উদ্যোগকে সফল করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে পলিথিনের শপিং ব্যাগ এবং পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময় শর্তসাপেক্ষে সব রকমের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু কাগজে-কলমে এটি বাস্তবায়িত হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, পাট মন্ত্রণালয় সব সুপারশপের সঙ্গে সভা করে পাটের শপিং ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে সব কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে। একই সঙ্গে পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে ওই সময় থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পলিথিন নিষিদ্ধের আইন প্রণয়নের ২২ বছর হলেও এতো বছর পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। আইন প্রয়োগ করা হয়নি। এখন যেহেতু নির্দেশনা আসছে, তাই সুপারশপগুলোতে পলিথিনের পর্যাপ্ত বিকল্প রাখতে হবে। ব্যাগের সর্বোচ্চ সাপ্লাই থাকতে হবে, না হলে মানুষকে ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্য করা যাবে না।
আগোরা সুপারশপ পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যতদিন পুরোপুরিভাবে পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ না হয়, ততদিন পর্যন্ত অভিযান চলবে।’ তিনি বলেন, ‘একটা বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ শুরু করেছি। একবার বছর দুয়েকের জন্য প্রয়োগ হয়েছিল। মার্কেট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পলিথিন প্রায় উঠে গিয়েছিল। তারপর আর মনিটরিং ছিল না, এটা আবার ফেরত এসেছে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সুপার শপের মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা খুশি মনে পাটের ব্যাগের ব্যবহার করতে রাজি হয়েছেন। কারণ পলিথিনের বিপদটা তারা বোঝেন। নিজেদের সন্তানদের জন্য এটা একটা ভালো কাজ।’
বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান এই উদ্যোগ সফলে সুপারশপ স্টোরগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যাগ আছে কী না এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদারকি করতে জোর দিয়েছেন। ব্যাগের দাম কম নাকি বেশি সেটাও দেখতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে তরুণদের মনিটরিংয়ে রাখা যায়। ব্যাগ ব্যবহার মানুষের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যারা বাজারে জুট ব্যাগ তৈরি করবে, তাদের প্রথম দিকে ট্যাক্সমুক্ত রাখতে হবে।’
এদিকে, পরে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মীনা বাজারের আউটলেট পরিদর্শন করেন। মীনা বাজারের বিভিন্ন সেকশন ঘুরে দেখেন তিনি। মীনা বাজারে চার ধরনের পাটের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হয়েছে। এসব ব্যাগের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাইজ ভেদে ১৩ থেকে ১৯ টাকা। এছাড়া মাছ-মাংস দেওয়া হচ্ছে কাগজের প্যাকেটে। মীনা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটা করছেন এবং নতুন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করছেন। মীনা বাজারের নিয়মিত ক্রেতা শায়লা আক্তার জানান, ‘সরকারের এই উদ্যোগ বেশ ভালো। দেশের বাইরেও এ রকম ব্যবস্থা দেখেছি।’
মীনা বাজার পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ক্রয় একেবারে নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা কেউ মানে না। অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখবেন, পলিথিনের ব্যাগকে সবার আগে টার্গেট করে বাজার থেকে সরানো হয়েছে। আমাদের দেশে সবার আগে আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখানে আমরা সুপারশপ দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করলাম।’
জানতে চাইলে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘পলিথিনের আইন প্রয়োগ করতে ২২ বছর লেগেছে। মূলত প্রশাসনের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল না, ফলে আইন প্রয়োগ হয়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে।’ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ অভ্যাসের দাস, তাদের সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। সুপারশপ থেকে যারা কেনাকাটা করে তাদের ব্যাগ কেনার সামর্থ্য রয়েছে। খোলাবাজারে ব্যাগের দাম নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতার নাগালের মধ্যে রাখার জন্য। আশা করি ব্যাগ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।’
কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে