ছিনতাইকারী অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছে কিনা নিশ্চিত নয়: বিমান প্রতিমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 3:58 pm | February 25, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী যুবকের বিমানবন্দরে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হতে হবে।
সোমবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ছিতাতাই চেষ্টার ঘটনা নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী যুবকের কাছে যে অস্ত্র ছিল সেটি আসল নয়, খেলনা পিস্তল ছিল বলে ইতিমধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তারপরও এত নিরাপত্তার ফাঁক গলে কিভাবে বিমানবন্দরে ‘অস্ত্র’ নিয়ে ছিনতাইকারী ঢুকল সেটি নিয়ে তদন্ত হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারীদের ধরতে কারো দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে মনে হয় না।
বিমান প্রতিমন্ত্রী জানান, বিকল্প একটি ফ্লাইটে ওই বিমানের ১৩৪ যাত্রীকে আজ দুবাইয়ে পৌছে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা পাইলট-ক্রুদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা ও যৌথবাহিনীর অভিযানে ব্যর্থ হয়েছে। রোববার বিকালে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার পর মধ্যাকাশে এ ঘটনা ঘটে।
এর পর অত্যন্ত সুকৌশলে ককপিটের দরজা বন্ধ করে বিমানটিকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন পাইলট। সেখানে উদ্ধার অভিযানের সময় উড়োজাহাজে থাকা অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করা হয়। পরে তার মৃত্যু ঘটে। এর আগে বিমানটির যাত্রী-ক্রুসহ সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
বিমানের একজন পরিচালক জানান, বিজি-১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার সিডিউল ছিল। এতে ১৩৪ যাত্রী ও ১৪ ক্রুসহ ১৪৮ জন ছিলেন।
এদিকে বিমান ছিনতাইচেষ্টাকারী যুবকের পরিচয় শনাক্ত হওয়া গেছে। ওই যুবকের নাম মো. পলাশ আহমেদ। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। সে বিমানের ঢাকা-চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ছিল বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের দেয়া তথ্যানুয়ায়ী, পলাশের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুরের দুধঘাটা গ্রামে। তার বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার। ওই উড়োজাহাজের ১৭/এ নম্বর আসনের যাত্রী ছিল পলাশ আহমেদ। সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের যাত্রী ছিল।
র্যাব বলছে, রোববারের অভিযানে নিহত বিমান ছিনতাইচেষ্টাকারী যুবকের আঙুলের ছাপ র্যাব ক্রিমিনাল ডেটাবেজের (অপরাধী তথ্যভাণ্ডার) একজন অপরাধীর সঙ্গে মিলে গেছে। ডেটাবেজ অনুযায়ী, যুবকের নাম পলাশ আহমেদ। তার বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার।
ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খি উড়োজাহাজের (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) যাত্রী তালিকায় তার নাম উল্লেখ ছিল AHMED/MD POLASH। সিট নম্বর ১৭এ। পলাশ আহমেদ ঢাকা-চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ছিল।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে জানান, নিহত ওই যুবক ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানে চড়েন চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে। চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল ওই বিমানটি।
ক্রিমিনাল ডাটাবেজ থেকে পলাশের পরিচয় শনাক্তের কথা বললেও ঠিক কী ধরনের অপরাধের জন্য তার নাম র্যাবের ক্রিমিনাল ডেটাবেজে যুক্ত করা হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এ মুফতি মাহমুদ।
ফ্লাইটের ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন শফিউল ও ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির। কেবিন ক্রু ছিলেন নিম্মি, হুসনে আরা, সাগর, সাকুর ও বিথী। ওই ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টেকঅফ করার পর পরই ককপিটে বসে ক্যাপ্টেন শফিউল ও ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির কোনোভাবে আঁচ করতে পারেন ভেতরে যাত্রীবেশে সন্ত্রাসী ঘাপটি মেরে আছে।
এর পরই পাইলট শাহ আমানতের টাওয়ারের কাছে জরুরি অবতরণের মেসেজ পাঠান। অত্যন্ত সুকৌশলে তিনি ফ্লাইটটি ল্যান্ড করার পর দ্রুত যাত্রীদের নিয়ে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোকাব্বির হোসেনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কালের আলো/এএ/এমএইচএ