নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ বিএনপি’র
প্রকাশিতঃ 4:37 pm | September 01, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছেন নেতাকর্মীরা। এসময় স্বৈরতন্ত্রের পতনের পরে ‘মুক্ত পরিবেশে’ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নেন তারা।
রবিবার দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার করবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।
‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ’
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য নিজে কাজ করছেন সেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আজকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি।
তিনি বলেন, যেকেনো বালাই আসুক, সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাবো এটা আমাদের শপথ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ২০২৪ সালে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার জন্যে বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে, ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য।’
‘আমরা আজকে এদিনকে স্মরণ করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকে আমরা এই দিনটিকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামী দিনে সঠিক রাজনীতি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আদর্শগুলোকে বাস্তবায়িত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।’
‘চন্দ্রিমা উদ্যানে মানুষের ঢল’
বিএনপির জন্মদিন পালনে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসেন। তারা ‘শুভ শুভ জন্মদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘লও লও লও সালাম, জিয়া তুমি লও সালাম’, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’ ইত্যাদি স্লোগানে বিজয় সরণি থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান সরব করে রাখে নেতাকর্মীরা। কর্মীরা রঙিন ব্যানার নিয়ে আসে। কর্মীদের মাথায় বাঁধা ছিল বিএনপির পতাকা সম্বলিত ফিতা।
বেশ কয়েক বছর পরে এই প্রথম চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিস্থলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল। অতীতে পুলিশি নিরাপত্তার কারণে নেতাকর্মীদের মিছিল এবং প্রবেশে ছিল নানা বিধিনিষেধ।
জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এই সময় দলের শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, নাসির উদ্দিন অসীম, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শাম্মী আখতার, মাহবুবুল হক নান্নু, হারুনুর রশীদ, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী আবুল বাশার, আমিরুজ্জামান শিমুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা ছিলেন। অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ছিলেন সাইফুল ইসলাম নীরব, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
‘বিএনপির যাত্রা যেভাবে শুরু’
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের ‘যূথবদ্ধ শক্তিমঞ্চ’ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) বিলুপ্ত করে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। এই দলে যুক্ত হয় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, মাওলানা আবদুল মতিনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও রসরাজ মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ তফসিলি ফেডারেশন।
‘জিয়া থেকে খালেদা’
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চেয়ারম্যান হন। তার মৃত্যুর পর কিছুদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এরপর খালেদা জিয়া দলের দায়িত্বে আসেন ১৯৮৩ সালে।
বিএনপির ৪৬ বছরের ইতিহাসে ৪১ বছর ধরে দলের একটানা সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজায় খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন লন্ডনে অবস্থারত তারেক রহমান।
চার বার ক্ষমতায় ও দুই বার বিরোধী দলে থাকা এই দলটি বিভিন্ন সময় নানা বাধা-বিপত্তির মুখেও পড়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর একাদশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি সবচেয়ে কম ৬ জনকে নিয়ে সংসদে আসে।
‘বন্যায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত’
দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহে ভয়াবহ বন্যার কারণে বিএনপি তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষিত কর্মসূচি সীমিত করে এর অর্থ দলের ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে। ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সারাদেশে শোভাযাত্রা, মৎস্য অবমুক্তকরণ এবং বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ছিল।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারাদেশে উত্তোলন করা হয় দলীয় ও জাতীয় পতাকা। দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল হয়।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হয়। টানা আড়াই বছর শেখ হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞা দলের মুখপত্র দৈনিক দিনকাল বন্ধ থাকার পর রবিবার এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণীতে দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ