সেনা সদস্যদের কণ্ঠে মানবতার জয়গান; বন্যায় উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণের হালহকিকত দেখতে ফেনীতে সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 11:12 pm | August 27, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
বন্যায় মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে ফেনীতে। শহর থেকে গ্রাম যেন ডুবন্ত এক জনপদ। স্বপ্নের সংসার তলিয়ে গেছে। ভয়াবহ বানের সঙ্গে যুদ্ধ করছে মানুষ। কারও সঙ্গে নেই কারোর কথন। কেউ অভুক্ত, কারোর জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম আধা পেট খেয়ে। ত্রাণের জন্য হাহাকার। দুর্গম এলাকায় বন্যাপীড়িত মানুষ কেমন আছে, কীভাবে চলছে তাদের যাপিত জীবন, উদ্ধার তৎপরতার হালহকিকত ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে জেলার ছাগলনাইয়াতে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন, ত্রাণ বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
মানবতার জয়গানে এমন দু:সময়ে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব, দৃঢ়ভাবে এমনটি বিশ্বাস করেন বলেই কীনা নির্ভীক চিত্তে, আলোর পথরেখা অঙ্কন করে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে সেনাপ্রধান উজ্জীবিত করেছেন নিজ বাহিনীর সদস্যদের। শুধু তাই নয়, বন্যাদুর্গতদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর চাহিদা সম্পর্কে অবহিত হওয়া থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে চলমান উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে অধিকতর ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে করণীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কেও মতবিনিময় করেছেন। এসময় তিনি উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণের কাজে নিয়োজিত সেনাসদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
জানা যায়, ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহস, ধৈর্য এবং আন্তরিকতার সঙ্গে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যা কবলিত এলাকাসমূহে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য বিপদে ও সঙ্কটে বানভাসিদের পাশে রয়েছেন। পানিবন্দি মানুষকে মানবিকতার উজ্জ্বল আভায় পরশ পাথর হয়েই এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গতদের পাশে থাকার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা জানান দিয়েছেন একদিন-প্রতিদিন। সেনাবাহিনীর বহুমাত্রিক মানবিক কার্যক্রমের পদক্ষেপ বন্যার্তদের মাঝে জাগিয়েছে আশার আলো। জীবনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই বিপন্ন মানুষকে ‘নিরাপদ’ করতে তাঁরা ছুটছেন অহর্নিশ। সাধারণের হৃদয়গ্রোথিত আবেগ, শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসার সঙ্গে অর্জন করেছেন অভূতপূর্ব সম্মান।
সেনাপ্রধানের পরিদর্শনকালে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কুমিল্লার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত সোমবার (২৬ আগস্ট) রাতে জানানো হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপ ১৫টি হেলিকপ্টার সর্টির মাধ্যমে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১১ জন মুমূর্ষু রোগীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে স্থানান্তর ও ২৪ জন ব্যক্তিকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হতে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও ৪ হাজার ৮৩৯ প্যাকেট ত্রাণ, ৫০ হাজার ৪০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি, ৫০০ মোবাইল ফোন ও এক লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সিলেট, চট্টগ্রাম, ফেনী সদর, ফাজিলপুর, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, পরশুরাম ও মধুগ্রাম এলাকায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
কালের আলো/এমএএএমকে