ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচারের ‘প্রাইম টার্গেট’ সেনাপ্রধান, সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস
প্রকাশিতঃ 10:45 pm | August 20, 2024
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:
ভারতীয় গণমাধ্যমে গোয়েবলসীয় কায়দায় পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব আর অপপ্রচার। বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মূলধারার গণমাধ্যমে অপরিণামধর্শী কুৎসিত ধারার অপকৌশল বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এবার চক্রটির ‘প্রাইম টার্গেট’ হয়েছেন দেশপ্রেমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শনিবার (০৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’কে ঘিরে রীতিমতো মিথ্যাচার, মনগড়া আর ফরমায়েশী অপতথ্যে ভারতীয় পত্রিকা ‘দ্য উইক’ খবর প্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
যেখানে নিজেদের হিংসা, ঈর্ষা ও পরশ্রীকাতরতা মোটাদাগে প্রতীয়মান হয়েছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ কল্পকাহিনীতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে জড়ানো হয়েছে। অথচ দেশের ক্রান্তিকালে সেনাপ্রধানের সাহসী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে জনেজনে। সেই বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর মূল বার্তা ছিল পরিস্কার। তিনি বলেছিলেন, ‘জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।’
কথা দিয়ে কথা রেখেছেন সেনাপ্রধান
প্রকৃত অর্থেই সেনাপ্রধান তাঁর সেদিনের কথা রেখেছেন। নিজের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে বার বার তিনি এটি প্রমাণ করেছেন। জনগণের আত্মার স্পন্দন ছোঁয়া তাঁর ওইদিনের এমন দৃঢ়চেতা বক্তব্য নিজের বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের আত্মা ও শরীরে প্রজ্জ্বলিত হয় গভীরভাবে। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে সেদিনের বৈঠকটি শেষ হলেও দেশপ্রেমিক ও পেশাদার সেনাবাহিনী সংক্রান্ত মিথ্যাচারের বেসাতি নির্ভর এ ধরনের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের নিকট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয় সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য আইএসপিআর এর সাথে যোগাযোগ করাই সমীচীন।’
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠন এবং দেশের প্রতিটি দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ অকুতোভয় সেনানীরা দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের আন্তরিকতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা এবং সর্বোপরি নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি ও প্রভূত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে চলেছে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুধু কথায় নয় কাজের মধ্যে দিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রমাণ করেছে জাতীয় যেকোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। তাঁরা জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবেই দেশের জনগণের পাশে আছে। একই সঙ্গে দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব রকম সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।
সেদিনের বৈঠকের আদ্যোপান্ত
চলতি বছরের গত শনিবার (০৩ আগস্ট) সেনাসদরের হেলমেট অডিটোরিয়ামে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ গ্রহণ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি সেদিন অনির্বাণ এক শিখার মতো অফুরন্ত শক্তি ও সাহসের বর্ণময় মন্ত্র গেঁথে দেন উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের হৃদয়-মস্তিষ্কে। সেনাপ্রধানের কার্যকর এ দিকনির্দেশনায় অশান্বিত হন বাহিনীটির সবাই।
নিজেদের প্রবল সাহস, সততা ও আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেদীপ্যমান করেন দেশের প্রতি দায়িত্ববোধকে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক।’ তিনি যেকোন পরিস্থিতিতে জনগণের জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেন। তাঁর ঐতিহাসিক এসব দিকনির্দেশনা প্রকারান্তরে নিজেদের বিবেক, মূল্যবোধ, রুচিবোধ ও দেশপ্রেমের গভীর দর্শনের বহি:প্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওইদিন আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এদিন তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে সকল সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলমান বিভিন্ন গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় সেনাসদরের উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারাসহ সকল সেনানিবাস থেকে ফরমেশন কমান্ডাররাসহ সকল পদবির সেনাকর্মকর্তারা ভিডিও টেলিকনফারেন্স (ভিটিসি) এর মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট হবেন না এবং অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারা যা দেখছেন তা সত্য নাও হতে পারে। গুজব এড়িয়ে চলুন। দেশে এখন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা স্বাভাবিক করার দায়িত্বে সেনাবাহিনীকে সারাদেশে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কারো মনে কোনো প্রশ্ন জন্ম নিলে সরাসরি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন এবং কখনোই গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ আইএসপিআর’র
গত সোমবার (১৯ আগস্ট) বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্তৃক ‘সেদিন বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ভারতীয় পত্রিকা ‘দ্যা উইক’ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয় সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্য আইএসপিআর এর সাথে যোগাযোগ করাই সমীচীন।
প্রকৃতপক্ষে, উক্ত বৈঠকটি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক, যা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং সুষ্ঠুভাবে এর সমাপ্তি ঘটে। দেশপ্রেমী ও পেশাদার সেনাবাহিনী সংক্রান্ত এ ধরনের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের নিকট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় গণমাধ্যমের নিকট থেকে দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের প্রত্যাশা করে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য চেইন অব কমান্ড এর প্রতি দৃঢ় আনুগত্য এবং বিশ্বস্ততা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে, যার প্রতিফলন তারা প্রতিনিয়ত প্রমাণ প্রমাণ করেছে এবং করছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যম কর্তৃক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বক্তব্যের প্রতিফলন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশা করে।
আইএসপিআর আরও জানায়, শুধুমাত্র বহির্দেশের কোন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত অপপ্রচারের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করা এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়াতে সাহায্য না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবাদ মাধ্যমসমূহকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধপরিকর।
কালের আলো/এমএএএমকে