ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নিহত ৫০

প্রকাশিতঃ 8:10 pm | August 04, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষে বিভিন্ন জেলায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।

এর মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, রংপুরে ৫ জন, ফেনীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, লক্ষ্মীপুরে ৩ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ২ জন, সিলেটে ২ জন, ঢাকার আশুলিয়ায় একজন, বরিশালে একজন, জয়পুরহাটে একজন ও কুমিল্লায় একজন মারা গেছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকেই অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে রাস্তায় নামে ছাত্র জনতা। এদিন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে নামেন। এতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ যুক্ত হয় আন্দোলনকারীদের দমাতে। নিহতদের মধ্যে আন্দোলনকারী যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নরসিংদীতে চেয়ারম্যনসহ নিহত ৬

নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছয়জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে তিন জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—চরদীঘলদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন, সদর উপজেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার ও আওয়ামী লীগ নেতা মনির। বাকি তিন জনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রংপুরে সংঘর্ষে কাউন্সিলরসহ নিহত ৫

বিভাগীয় নগরী রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে রংপুর নগরীতে সংঘর্ষ চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি।

নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা।

নিহত অন্য চারজন হলেন নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খরশু মিয়া, যুবলীগ নেতা মাসুম, হারাধন রায়ের ভাগ্নে এবং অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেন নগরীর টাউনহল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যান। পরে টাউন হলকেন্দ্রিক অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়।

ফেনীতে সংঘর্ষে নিহত ৫

ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া এই হামালায় ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংর্ঘষে নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন– ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন।

সিরাজগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ, নিহত ৪

সিরাজগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলার দুই সংসদ সদস্যের বাড়িঘর ও থানায় ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, রোববার (৪ আগস্ট) আন্দোলনকারীরা প্রথমে সদর উপজেলার এসএস রোডে জড়ো হন এবং পরে বেলা ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। এর পরপরই সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এতে আরও তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হন।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ-২ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত ও মেরিনা জাহানের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (এসিল্যান্ড) কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয়।

ঢাকায় আ.লীগ নেতাসহ নিহত ৪

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় সংঘর্ষে নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।

বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তৌহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তৌহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছেন।

পাবনায় গুলিতে নিহত ৩

পাবনা শহরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলেন— পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং পাবনা শহরের আরিফপুরের মাহিবুল (১৬) ও ফাহিম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী।

রোববার বেলা ১১টার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের গেটে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশাল মিছিল নিয়ে পাবনা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। বেলা ১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলি করেন। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এসময় শিক্ষার্থীরা পাল্টা আক্রমণ করে আবু সাঈদের দুই সহযোগীকে পিটিয়ে আহত করেন এবং তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন অনেকেই।

নিহত তিনজন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা ছাত্ররা।

রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন ঢাকা মেইলকে তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন।

একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৩

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

দুজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ এবং অপরজনের বিষয় নিশ্চিত করেছেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন।

তিনজনের মধ্য দুজনের লাশ সদর হাসপাতালে রয়েছে ও একজন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালে রয়েছেন। নিহতের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম অঞ্জনা (৩৫)। তার বাড়ি সদর উপজেলায় যশোদল এলাকায়।

বগুড়ায় সংঘর্ষে নিহত ৩

বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে বগুড়া শহরে একজন ও দুপচাঁচিয়ায় একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইজনের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদের একজন বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম (৪০)। তিনি বিএনপি কর্মী। অপরজন অজ্ঞাত ব্যক্তি (৬০)। তারা শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

অপরজন কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের মমিনুল ইসলাম (৩৪)। তিনি দুপচাঁচিয়া থানায় হামলা করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তার লাশ দুপচাঁচিয়া উপজেলা হাসপাতালে রয়েছে।

এছাড়াও আন্দোলনকারীরা বগুড়া টিএনটি অফিস, আওয়ামী লীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ অফিস, টাউন ক্লাব, সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়, বগুড়া সদর আসনের এমপি রাগেবুল আহসান রিপুর বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।

মুন্সিগঞ্জে গুলিতে ৩ জনের মৃত্যু

মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাদাঁনে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ভোলায় নিহত ৩

ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে ৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি করছেন, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

মাগুরায় সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ২

মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন।

রোববার (৪ আগাস্ট) সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।

মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেয়। অভিযোগ, এ সময় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়।

এদিকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৌমেন সাহা জানান, আন্দোলনকারীরা তাদের কাছে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করলে উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা ওই কিশোরের লাশ নিয়ে বেরিয়ে যায়। নিহতের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পারেননি।

বরিশালে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা নিহত

বরিশালে টুটুল চৌধুরী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছেন আন্দোলনকারীরা। টুটুল চৌধুরী বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

নিহতের স্বজনরা জানান, নগরের করিম কুটির এলাকায় আন্দোলনকারীরা আকস্মিক হামলা চালায়। এ সময় সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। সেখান থেকে টুটুল চৌধুরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লায় গুলিতে যুবক নিহত 

কুমিল্লার দেবিদ্বারে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন দেবিদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া।

নিহত আবদুল্লাহ রুবেল (৩৩) উপজেলার বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। তিনি প্রান্তিক নামের একটি পরিবহনের বাসচালক ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে শিক্ষার্থীরা সড়কে বিক্ষোভ করলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। এসময় দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। সং

ঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন পথচারী রুবেল। তাকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ