অনন্য সামরিক সম্প্রীতি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান

প্রকাশিতঃ 10:06 pm | July 04, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ তাঁরা। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা জাগ্রত থাকার প্রত্যয় সবার চোখে-মুখে। দীর্ঘ কঠিন সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অংশ নেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমিতে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ। বাদ্যের তালে তালে দৃঢ়পায়ে এগিয়ে চলেন সুসজ্জিত নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের দল। বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০২১বি ব্যাচের ৫৭ জন মিডশিপম্যান এবং ২০২৪ ব্যাচের ১২ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৯ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। যেখানে রয়েছেন ১৯ জন মহিলা মিডশিপম্যান ও একজন মহিলা ডাইরেক্টী এন্ট্রি অফিসার।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইতিহাসে সামরিক সম্প্রীতির অনন্য এক উদাহরণও ঘটে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ভরপুর দিনটিতে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এবারই প্রথম ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল দীনেশ কুমার ত্রিপাঠী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে ৮টি প্লাটুনে বিভক্ত নবীন কর্মকর্তাদের সালাম গ্রহণ করেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারীদের হাতে তুলে দেন পদক।

‘সমুদ্রে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে’ জানিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে এ সময় তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের শান্তি ও নিরাপত্তায় একসঙ্গে কাজ করবে ভারত ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বেঁচে থাকবে চিরকাল।’ সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের প্রশংসা করে নানাদিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যও রাখেন ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান।

সন্তানদের এমন অর্জনে গর্বিত অভিভাবকরাও
সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর ৬৯ জন নবীন কর্মকর্তা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজে লাগানোর পাশাপাশি সুবিশাল সমুদ্র রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সন্তানদের এমন অর্জনে গর্বিত অভিভাবকরাও। অভিন্ন কণ্ঠে তাঁরা বলেন, ‘আমার সন্তান আজকে নেভাল অফিসার হয়েছে। গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে। প্রয়োজনে দেশের জন্য প্রাণ দেবে। দেশের নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে ভূমিকা রাখবে। আপসহীন থাকবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে।

জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শক্তিশালী নৌবাহিনী
দেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর দক্ষ নেতৃত্বে অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌ বহরে বিদ্যমান জাহাজসমূহের আধুনিকায়নের লক্ষে উন্নতমানের মিসাইল গান এবং প্রযুক্তিসম্পন্ন অস্ত্র সংযোজিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও সক্ষম বাহিনী হিসেবে গঠনে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধানের, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল দীনেশ কুমার ত্রিপাঠী তাঁর ভাষণে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিবেদন করেন। সেই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয়দের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করেছে। দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যকার অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক মহড়াসমূহ পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কেরই প্রতিফলন। ত্রিমাত্রিক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাতীয় উন্নয়ন, সামুদ্রিক সংকট মোকাবেলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে।’ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কঠোর প্রশিক্ষণ তরুণদের দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে প্রস্তুত করবে যারা যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আইএসপিআর আরও জানায়, মিডশিপম্যান ২০২১বি ব্যাচের মিডশিপম্যান মুনকাসীর আবেদীন আলভী, (এক্স), বিএন সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ অর্জন করেন। এছাড়া মিডশিপম্যান মোঃ তাওসিফ উল হক, (ই), বিএন প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২৪ এ ব্যাচের এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মোনাজাত-ই জান্নাত, (ই), বিএন সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা, ভারতীয় প্রতিনিধি দল ও সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে