স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে: মেয়র আতিক

প্রকাশিতঃ 5:21 pm | July 03, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রায়ই দেখা যায় আট থেকে দশজন শিক্ষার্থী ভ্যানে করে স্কুলে যাওয়া আসা করে। অনেক স্কুলে মাইক্রোবাসে করেও যাওয়া আসা করতে দেখা যায়।

এই ধরনের ভ্যান ও মাইক্রোবাসগুলো অনেকটা অনিরাপদ। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। পরীক্ষামূলকভাবে বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনটি বাস দিয়ে এটি শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্কুলগুলোতে এই স্কুল বাস সার্ভিস চালু করা হবে। স্কুল বাস সার্ভিস শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

বুধবার (০৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করছেন, তার সঙ্গে সিটি করপোরেশন যোগ হলে তখন ভিন্নমাত্রা পায়। এই স্কুল বাস সার্ভিস চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু করেছে। আমরা অনুরোধ করবো বাস সার্ভিসটি শুধু স্কুলভিত্তিক না করে, এলাকাভিত্তিক কোনো রুট পরিচালিত করা যায় কি না। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে বাস দেওয়া কতটা সম্ভব হবে জানি না। তবে বাস শেয়ারিংটা যেন হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিসের সুবিধা পেলে সিটি করপোরেশনের কষ্ট সার্থক হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধু সরকারি ও আধা সরকারি স্কুল নয়; যেসব বিদ্যালয়ে বেশি নিজস্ব গাড়িতে চড়ে শিক্ষার্থীরা আসে সেসব বিদ্যালয়কে মার্ক করতে হবে। গাড়ির বাস্তব ব্যবহার বোঝাতে হবে। গাড়ি যে কোনো ধরনের হতে হবে। পয়সা থাকেলই দামি গাড়িতে করে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে হবে এমন মনোভাব থেকে অভিভাবকদের বেরিয়ে আসতে হবে। স্কুলের পথ হাঁটার মধ্যে পড়লে হেঁটেই স্কুলে আসার অভ্যাস করাতে হবে বাচ্চাদের। সন্তানকে যেভাবে গড়া হবে তারা তেমনি বেড়ে উঠবে। তাই আমাদের সন্তানদের ভোগবাদী মানসিকতা থেকে দূরে রাখতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সন্তানরাই বাবা-মায়ের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট স্কুল বাসগুলোয় সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও থাকবে। একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে অভিভাবকেরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন। প্রতিটি বাসে নিবেদিত ট্রিপ ম্যানেজার থাকবে। পরীক্ষামূলক চালু করেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসির স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসে বিদ্যা নিকেতন স্কুলের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। স্কুলটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামী জানুয়ারিতে তিন হাজার শিক্ষার্থী স্কুল বাস সার্ভিসের আওতায় আসবে। এজন্য ২০টি বাস প্রয়োজন হবে। যেখানে অনেকগুলো যানবাহনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা করতো সেখানে ২০টি বাসের মাধ্যমে সার্ভিসটি দেওয়া সম্ভব হবে। এর ফলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কম হবে, পরিবেশ দূষণ কমবে। অন্যান্য স্কুলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাব এই বাস সার্ভিসের সুবিধার আওতায় আসার। আমরা নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামে লন্ডনে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখে এসেছি কীভাবে এই সার্ভিসটি চলছে আমরাও প্রক্রিয়াটিও সেভাবে করতে চাই। অভিভাবকদের সহায়তা চাই। কোনো সমস্যা সামনে এলে সেটাও সমাধান করা হবে।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এই স্কুল বাস সার্ভিস চালুর জন্য কাজ করতে হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বনানী এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। আমরা প্রাথমিকভাবে বনানী এলাকায় তাই সার্ভিসটি শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি৷ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। স্কুল বাসের সুবিধা সম্পর্কে বুঝিয়েছি। বিদ্যা নিকেতন স্কুলে কার্যক্রমটি শুরু করতে পেরেছি। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ অন্যান্য সকল সরকারি বেসরকারি স্কুলকে আহ্বান করছি বাস সার্ভিসের আওতায় আসার জন্য। স্কুলগুলোর প্রতি শিক্ষামন্ত্রীও এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

এসময় মেয়র জানান স্কুল বাস সার্ভিসটি পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের যেন বেশি ব্যয় না হয় সেজন্য ডিএনসিসি থেকে একটি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা, হাছিনা বারী চৌধুরী ও খালেদা বাহার বিউটি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান প্রমুখ।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ